চীনের সামরিক শক্তি সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাকতে ভারতের প্রতি চীন আহ্বান জানিয়েছে। চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত দৈনিক গ্লোবাল টাইমসের এক নিবন্ধে এ আহ্বান জানানো হয়। আজ (বৃহস্পতিবার) দৈনিকটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ইয়াং শেং’র লেখা "ইন্ডিয়া আর্জড টু ড্রপ ডিলিয়্যুশন অব মিলিটারি" শীর্ষক নিবন্ধে এ আহ্বান জানানো হয়। নিবন্ধের উপ শিরোনামে বলা হয়েছে, ১৯৬২ সালের চেয়েও ব্যাপকতর হবে চীনের বিজয়। নিবন্ধে বলা হয়, অবৈধভাবে চীনের এলাকায় ঢুকে পড়া সেনাদের অবিলম্বে সরিয়ে নেয়ার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন। বিরাজমান সামরিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে এ আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে নিবন্ধে বলা হয়েছে, সামরিক সক্ষমতার ব্যাপারে অতিমাত্রায় আস্থাবান না হওয়ার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া, ভারতের সামরিক সক্ষমতায় ভীত হয়ে চীন সার্বভৌমত্বের বিষয়ে আপস করবে তাও না ভাবতে নয়াদিল্লির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে নিবন্ধে বলা হয়েছে- ১৯৬২ সালে চীন ও ভারতের মধ্যে সামরিক শক্তির দূরত্ব যা ছিল এখন তা আরো বেড়েছে। ১৯৬২ সালে চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্তে প্রথম যুদ্ধ হয়েছিল। অবশ্য এরপর ১৯৬৭ এবং ১৯৮৭ সালে আরো দু’ দফা যুদ্ধ হলেও তার কোনটাই "৬২ সালের যুদ্ধের মতো ব্যাপক ছিল না।
"চড়া মূল্য দিতে হবে" এমন উপ-শিরোনামে সাংহাই অ্যাকাডেমী অব সোশ্যাল সায়েন্সের গবেষক হু জিইয়ং গ্লোবাল টাইমসে বলেন, ১৯৬২ সালে মারাত্মক দৈন্য দশায় থাকা সত্ত্বেও চীনের গণমুক্তি ফৌজ বা পিএলএ ভারতের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিজয় অর্জন করেছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি পুরোটাই পাল্টে গেছে। কাজেই চীন প্রত্যাশা করে- নিজের ভালোর জন্যেই ভারত কোনো অযৌক্তিক পথ বেছে নেবে না। তা নাহলে, অতীতের চেয়ে চড়া মূল্য দিতে হবে ভারতকে। অন্যদিকে, বর্তমানে কেবল সামরিক নয় বরং অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত দিক থেকেও চীনের সঙ্গে ভারতের কোনো তুলনাই চলে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, ভারতের প্রতি চীনের কোনো বৈরী মনোভাব নেই। ভারতের সঙ্গে চীন সম্পর্ক এবং সহযোগিতা জোরদার করতে চায় বলে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ভারত বন্ধ করে না দেয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সংকট সমাধানের দরজা সব সময়ই খোলা থাকবে। চীনা সীমান্ত বরাবর ভারত বিশাল সামরিক সম্পদ মোতায়েন করেছে এবং দুই লাখের বেশি সেনা রয়েছে এ এলাকায়। এ মন্তব্য করেছেন চীনের সামরিক বিশেষজ্ঞ সং ঝাওংপিং।
এর আগে পিএলএল’র রকেট বাহিনীতে কাজ করেছেন তিনি। তিনি আরো জানান, আক্রমণের কাজে ব্যবহৃত হেলিকপ্টার এবং কামানসহ অনেক যুদ্ধাস্ত্র অন্যান্য দেশ থেকে কিনছে ভারত। পার্বত্য অঞ্চলে নিজ সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর রেখে এ সব অস্ত্র ভারত কিনছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। ভারতীয় বাহিনীর পার্বত্য যুদ্ধে অনেক অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ভারতীয় বাহিনীর অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্বলতা রয়েছে। প্রথমত, ভারতের বেশির ভাগ অস্ত্রই আমদানিকরা। চীনের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে বাঁধলে অস্ত্রের যোগান কি করে বজায় রাখা সম্ভব হবে বলে প্রশ্ন করেন তিনি। দ্বিতীয়ত, ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল। ২০২০ সালের মধ্যে সামরিক যোগাযোগের জন্য ৭৩টি মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে ভারত। এ পরিকল্পনার মাত্র এক তৃতীয়াংশ এ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। তৃতীয়ত: বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্র কেনার কারণে এক অস্ত্র ব্যবস্থা অন্য অস্ত্র ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খায় না বলে জানান তিনি। পাশাপাশি ভারতের দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোটেও নির্ভুল নয়। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা শিনহুয়ার খবরে বলা হয়েছে, পিএলএ’র পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ড সম্প্রতি সাঁজোয়া বিগ্রেডকে পাঠিয়েছে। সাগর পৃষ্ট থেকে ৫১০০ মিটার ঊর্ধ্বে সামরিক মহড়ার জন্য এ বিগ্রেডকে পাঠানো হয়। এই প্রথম এ ধরণের আবহাওয়ায় মহড়ার জন্য সাঁজোয়া ব্রিগেডকে পাঠানো হলো। শিনহুয়ার প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, এ বিগ্রেডে চীনের যুদ্ধের প্রধান অত্যাধুনিক ট্যাংক টাইপ-৯৬বি রয়েছে।
খবর - পার্স টুডে