বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা এক বছর পরীক্ষামূলকভাবে মাটি ছাড়া আদা চাষে সফলতা পাওয়ায় এবার চূড়ান্তভাবে পরীক্ষা শুরু করেছেন।এবার মাটি ছাড়াই আদা চাষ হবে। গবেষণা কার্যক্রম সফল হলে দেশে আদা চাষে ঘটবে নতুন বিপ্লব। মসলা গবেষণা কেন্দ্রের কৃষি বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, আগামী বছরই চাষীদের মাঝে এর বীজ সরবরাহ করতে পারবেন। জানা গেছে, বাংলাদেশে ২০ রকম মসলার চাষ হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে আদা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কাণ্ড পচা রোগের কারণে এর ভালো ফলন পাওয়া যায় না। আবার ভালো ফলন পেলেও সুস্থ বীজ পাওয়া হয়ে ওঠে দুষ্কর। কাণ্ড পচন রোধ করতে আদা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। নানা তথ্য সংগ্রহের পর গত বছর মাটি ছাড়া আদা চাষ করে প্রাথমিকভাবে সফলতা মেলে। এ সফলতার সূত্র ধরে চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য এ প্রক্রিয়ায় আদা চাষ করা হয়েছে। এবার সফলতা মিললে আগামী বছর থেকে অনুমতিসাপেক্ষে এ আদার বীজ কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হবে।
বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জানান, আদা চাষে প্রধান সমস্যা হলো আদার কাণ্ড পচা রোগ। এ রোগ থেকে আদা বাঁচাতে গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে মাটি ছাড়া আদা চাষ শুরু হয় বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমবারের মতো প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় প্রথমে একটি সাধারণ মানের পলিব্যাগে ধানের গুঁড়ো, নারকেলের ছোবড়ার গুঁড়ো এবং বিভিন্ন জৈব সার দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে এতে আদার বীজ বপন করতে হয়। বপনের ১০ মাস পর ফলন পাওয়া যায়। এ পদ্ধতির নাম দেয়া হয়েছে ‘সয়েল লেস কালচার’। প্রথম পর্যায়ে গবেষকরা সফল হয়েছেন। এখন চলছে চূড়ান্ত পরীক্ষা। মসলা গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে সারা দেশে এর বীজ কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করা হলে যেকোনো স্থানে স্বাস্থ্যসম্মত আদা চাষে সফল হবেন কৃষকরা। আগামী বছরই কৃষক পর্যায়ে সুস্থ আদার বীজ সরবরাহ করতে পারবেন বলে আশা করছেন গবেষকরা।
বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কেএম খালেকুজ্জামান জানান, বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ১৪ মসলার ৩৩ জাত উন্নয়ন করা হয়েছে। আরো কিছু জাত উদ্ভাবন পর্যায়ে রয়েছে। সেগুলো অনুমতি পেলে প্রকাশ করা হবে। বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. কলিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে আদা চাষে প্রথম সমস্যা হলো কাণ্ড পচা রোগ। এ রোগের প্রাদুর্ভাব দুভাবে বিস্তার লাভ করে। এর একটি মাটির মাধ্যমে, অন্যটি বীজের মাধ্যমে। কৃষকরা মাটি অথবা বীজ শোধন করে তা জমিতে বপন করতে পারলে আদার ফলন অনেকাংশে বাড়বে। সেই সঙ্গে রোগের প্রকোপও কমে আসবে। মাটি শোধন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তবে ‘সয়েল লেস কালচার’ পদ্ধতিতে আদা চাষ করা হলে সুস্থ বীজ উত্পাদন সম্ভব। আর এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম বছরে সফলতা পাওয়া গেছে। এবারো সফলতার আশা করছেন তিনি। সফলতা পাওয়া গেলে আগামী বছর কৃষকরা মাঠ পর্যায়ে মাটি ছাড়া আদা চাষ করতে পারবেন।