রাঙ্গিরি ডাম্বুলা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বাংলাদেশকে ব্যাটিং-এ আমন্ত্রণ জানায় শ্রীলংকা। শুরুটা ভালো করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। ৪ ওভারে ২৫ রান যোগও করেন তারা। কিন্তু পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে উইকেট পতনের খাতায় নাম তুলেন সৌম্য। ১৩ বলে ১০ রান করেনসুরঙ্গ লাকমালের বলে বিদায় নেন তিনি।
দলীয় ২৯ রানে সৌম্যর বিদায়ে উইকেটে আসেন সাব্বির রহমান। তামিমের সাথে বোঝাপড়াটা ভালোভাবেই গড়ে তুলেন সাব্বির। মারমুখী মেজাজেই ছিলেন সাব্বির। অন্য প্রান্তে সাবধান ছিলেন তামিম। উইকেট বাঁচিয়ে দলের স্কোরটা বড় করাই মূল লক্ষ্য ছিলো তামিমের।
ফলে ১৯তম ওভারে তিন অংকে পৌছায় বাংলাদেশের স্কোর। এরপরই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন সাব্বির। হাফ-সেঞ্চুরির পর অবশ্য আর বেশি দূর যেতে পারেননি আক্রমনাত্মক এ ব্যাটসম্যান। ৫৬ বলের ইনিংসে ১০টি চারের সাহায্যে ৫৪ রান করেন সাব্বির। তামিমের সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ১০১ বলে ৯২ রান যোগ করেন তিনি।
দলীয় ১১৯ রানে সাব্বিরের বিদায়ে বিপদ বাড়ে বাংলাদেশের। কারন চার নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে গিয়ে মাত্র ২ বল খেলার সুযোগ পান উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম। ১ রান করে ফিরতে হয় বাংলাদেশের টেস্ট দলপতিকে।
১ রানের ব্যবধানে সাব্বির-মুশফিকুরের আউটে চাপ অনুভব করেননি তামিম ও সাকিব আল হাসান। শ্রীলংকার বোলারদের উপর চড়ে বসেন তারা। সময়ক্ষেপন না করে দ্রুতই উইকেটের সাথে মানিয়ে নেন মুশির বিদায়ের ক্রিজে আসা সাকিব।
এতে সাহস বাড়ে তামিমের। ফলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৫তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। এরপর অবলীলায় উইকেটের চারপাশ থেকে রান তুলেছেন তামিম ও সাকিব। এতে বড় স্কোরের পথ পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
সেই পথের ভীত গড়ার পথে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অস্টম সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম। ১২৭তম বলে তিন অংকে পা রাখেন তিনি। এরপর অন্যপ্রান্তে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৩তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন সাকিব।
তামিমের সেঞ্চুরি ও সাকিবের হাফ-সেঞ্চুরির পর রানের গতি বেড়ে যায় বাংলাদেশের। তাতে দলীয় স্কোর ৩শ স্পর্শ করার পথে হাটতে থাকে টাইগাররা। কিন্তু ২৬৪ রানে সাকিবের বিদায়ে বড় স্কোর নিয়ে কিছুটা চিন্তায় পড়ে বাংলাদেশ। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭১ বলে ৭২ রান করে ফিরেন সাকিব।
সাকিব যখন ফিরেন তখনও বাংলাদেশ ইনিংসের ২৫ বল বাকী ছিলো। তবে তামিমকে নিয়ে রান তোলার কাজটা পরবর্তীতে ভালোভাবেই করছিলেন ছয় নম্বরে নামা মোসাদ্দেক হোসেন।
কিন্তু দলকে ৩শ রানে পৌছে না দিয়ে দলীয় ২৮৯ রানে থামেন তামিম। ১৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৪২ বলে ১২৭ রান করেন তামিম।
এরপর ইনিংসের বাকী ১৩ বল থেকে ৩৫ রান যোগ করেন মোসাদ্দেক ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এতে বাংলাদেশের স্কোর গিয়ে পৌছায় ৫ উইকেটে ৩২৪ রানে। যা শ্রীলংকার বিপক্ষে সর্বোচ্চ ও নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর।
শেষদিকে মোসাদ্দেক ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯ বলে ২৪ ও মাহমুদুল্লাহ ১টি ছক্কায় ৭ বলে ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন। শ্রীলংকার পক্ষে ২টি উইকেট নেন সুরাঙ্গা লাকমল।
এরপর ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে বড় স্কোর পেয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফির। তাই ইনিংসের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই শ্রীলংকার ওপেনার দানুষ্কা গুনাথিলাকাকে তুলে নেন ম্যাশ। আম্পায়ারের সিদ্বান্তে আউট হবার পরও রিভিউ নিয়েছিলেন গুনাথিলাকা। কিন্তু সেই রিভিউ বাঁচাতে পারেনি গুনাথিলাকাকে। তাই শুন্য হাতেই ফিরেন তিনি।
মাশরাফির সাথে বাংলাদেশের বোলিং উদ্বোধন করেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ম্যাশের সিদ্বান্তাটা যে সঠিক ছিলো, তা প্রমান করেন মিরাজ। নিজের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে কুশাল মেন্ডিসকে তুলে নেন তিনি। তিন নম্বরে নেমে ৪ রানের বেশি করতে পারেননি মেন্ডিস।
১৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোয় বিপদ ভর করে শ্রীলংকার উপর। সেই বিপদ আরও বাড়িয়ে দেন বাংলাদেশের আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ। প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গার উইকেট তুলে নেন তাসকিন। ওপেনার হিসেবে খেলতে নেমে ২৯ বলে ১৯ রান করেন থারাঙ্গা।
৩১ রানে তৃতীয় উইকেট হারানোর পর ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেস্টা করে শ্রীলংকা। সেই পথ অবশেষে দেখান দিনেশ চান্ডিমাল ও আসলে গুনারতেœ। রানের চাকা সচল রেখে ভয়ংকর হয়ে উঠার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন চান্ডিমাল-গুনারতেœ জুটি। কিন্তু তাদের আশাকে নিরাশায় পরিণত করেন সাকিব। গুনারতœকে ব্যক্তিগত ২৪ রানে থামিয়ে দিয়ে চতুর্থ উইকেটে চান্ডিমালের সাথে গড়ে উঠা ৭৩ বলে ৫৬ রানের জুটি ভাঙ্গেন সাকিব।
এরপর চান্ডিমালের সাথে উইকেটে যোগ দেন মিলিন্দা সিরিবর্ধনে। এই জুটি বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলছিলেন। তাদের রান তোলার পথ বন্ধ করে দেন মিরাজ। ৫৯ রানে থাকা চান্ডিমালের বিদায় নিশ্চিত করেন তিনি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২১তম হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া ইনিংসে ৬টি চার মারেন চান্ডিমাল।
চান্ডিমাল ফিরে যাবার পর শ্রীলংকাকে লড়াইয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন সিরিবর্ধনে, সচিত্র পাথিরানা ও থিসারা পেরেরা। তবে সিরিবর্ধনে ও পাথিরানাকে বড় ইনিংস খেলতে দেননি বাংলাদেশের বোলাররা। সিরিবর্ধনে ২২ রান করে মুস্তাফিজুরের ও পাথিরানা ৩১ রান করে মাশরাফির শিকার হন।
এরপর শেষ ভরসা হিসেবে শ্রীলংকাকে পাহাড় সমান রান টপকানোর স্বপ্ন দেখিয়েছেন পেরেরা। চার-ছক্কায় শেষ দিকে বাংলাদেশ বোলারদের লাইন-লেন্থহীন করে দেন তিনি। কিন্তু তাতে ভড়কে গিয়ে হাল ছাড়েনি টাইগার বোলাররা। দলীয় ২৩৪ রানে শ্রীলংকার শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে পেরেরার উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন মুস্তাফিজ। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৫ বলে ৫৫ রান করেন পেরেরা। বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর ৩টি, মাশরাফি-মিরাজ ২টি করে উইকেট নেন।
ম্যাচের সেরা হয়েছেন বাংলাদেশের তামিম। একই ভেন্যুতে আগামী ২৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ইকবাল ক গুনাথিলাকা ব কুমারা ১২৭
সৌম্য সরকার ক চান্ডিমাল ব লাকমল ১০
সাব্বির রহমান ক থারাঙ্গা ব গুনারতেœ ৫৪
মুশফিকুর রহিম ক এন্ড ব সান্দাকান ১
সাকিব আল হাসান ক সান্দাকান ব লাকমল ৭২
মোসাদ্দেক হোসেন অপরাজিত ২৪
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অপরাজিত ১৩
অতিরিক্ত (লে বা-১০, ও-১৩) ২৩
মোট (৫ উইকেট, ৫০ ওভার) ৩২৪
উইকেট পতন : ১/২৯ (সৌম্য), ২/১১৯ (সাব্বির), ৩/১২০ (মুশফিকুর), ৪/২৬৪ (সাকিব), ৫/২৮৯ (তামিম)।
শ্রীলংকা বোলিং :
লাকমল : ৮-০-৪৫-২,
কুমারা : ৮-০-৭৪-১ (ও-৩),
পেরেরা : ৮-০-৬৩-০,
পাথিরানা : ৫-০-২৭-০ (ও-২),
সান্দাকান : ৮-০-৪৩-১ (ও-৩),
গুনারতেœ : ১০-০-৪০-১ (ও-১),
গুনাথিলাকা : ৩-০-২২-০।
শ্রীলংকা ইনিংস :
দানুষ্কা গুনাথিলাকা এলবিডব্লু ব মাশরাফি ০
উপুল থারাঙ্গা ক মাশরাফি ব তাসকিন ১৯
কুশাল মেন্ডিস ক শুভাগত (অতিরিক্ত) ব মিরাজ ৪
দীনেশ চান্ডিমাল ক সৌম্য ব মিরাজ ৫৯
আসলি গুনারতেœ ক মোসাদ্দেক ব সাকিব ২৪
মিলিন্দা সিরিবর্ধনে ক শুভাগত (অতিরিক্ত) ব মুস্তাফিজুর ২২
সচিত্র পাথিরানা ক মাহমুদুল্লাহ ব মাশরাফি ৩১
থিসারা পেরেরা ক মাহমুদুল্লাহ ব মুস্তাফিজুর ৫৫
সুরাঙ্গা লাকমল ক সাব্বির ব মুস্তাফিজুর ৮
লক্ষণ সান্দাকান রান আউট (মুস্তাফিজুর) ৩
লাহিরু কুমারা অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (লে বা-৫, ও-৪) ৯
মোট (অলআউট, ৪৫.১ ওভার) ২৩৪
উইকেট পতন : ১/০ (গুনারতে), ২/১৫ (মেন্ডিস), ৩/৩১ (থারাঙ্গা), ৪/৮৭ (গুনারতেœ), ৫/১২১ (চান্ডিমাল), ৬/১৫৩ (সিরিবর্ধনে), ৭/১৭১ (পাথিরানা), ৮/২০৮ (লাকমল), ৯/২৩২ (সান্দাকান), ২৩৪/১০ (পেরেরা)।
বাংলাদেশ বোলিং :
মাশরাফি : ৭-২-৩৫-২,
মিরাজ : ১০-০-৪৩-২,
তাসকিন : ৯-০-৪১-১ (ও-২),
সাকিব : ৮-০-৩৩-১ (ও-১),
মুস্তাফিজুর : ৮.১-০-৫৬-.৩ (ও-১),
মোসাদ্দেক : ৩-০-২১-০।
ফল : বাংলাদেশ ৯০ রানে জয়ী।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)।