আপনি আছেন » প্রচ্ছদ » খবর

স্বামী বিবাহিত প্রেমিকাকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে উঠেছিল...

জীবন থাকলে সম্পর্ক থাকবেই। আর সম্পর্ক থাকলে থাকবে সমস্যা। প্রতিদিন ফেসবুকের ইনবক্সে ও ই-মেইলে আমরা অসংখ্য সম্পর্ক ভিত্তিক প্রশ্ন পাই, যেগুলোর কথা হয়তো কাউকেই বলা যায় না। পাঠকদের করা সেইসব গোপন প্রশ্নের উত্তর দিতেই আমাদের নিয়মিত আয়োজন "প্রিয় সম্পর্ক"। আর সম্পর্ক ভিত্তিক সেই প্রশ্নগুলোর উত্তরে পরামর্শ দিচ্ছেন গল্পকার রুমানা বৈশাখী, এডিটর ইন চার্জ (লাইফ ও সায়েন্স), প্রিয়.কম। আপনি চাইলে নিজের এমনই কোন একান্ত ব্যক্তিগত সমস্যার কথা লিখে জানাতে পারেন আমাদের।

আমরা প্রতিদিন চেষ্টা করবো বাছাইকৃত কিছু সমস্যার সমাধানে কাঙ্ক্ষিত পরামর্শটি দেবার। সমস্যার কথা লিখে জানান আমাদের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। নাম গোপন রাখতে চাইলে লিখে দেবেন "নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক"। আমাদের পেজ লিঙ্ক- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা। "রুমানা আপু, অনেক কষ্টে পড়ে আপনাকে এই চিঠি লিখছি। আমার বিয়ে হয়েছে ৭ বছর হল। আমার একটি ছেলে আছে ৩ বছর বয়সী। আমার সমস্যা হল আমার স্বামীকে নিয়ে। আমার সাথে বিয়ে হবার আগে একটি মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক ছিলো এবং তারা বিয়েও করেছিলো। তারপর আমার স্বামীর পরিবার সেটা মেনে না নিয়ে আমার সাথে বিয়ে দেয়। আমি এবং আমার পরিবার এই ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। সব কিছুই ঠিক চলছিলো, আমাদের সম্পর্কও ভালো চলছিলো (আমি তাই মনে করতাম)। কিন্তু বিয়ের ৬ বছর পর আমার স্বামী সেই মেয়েটার সাথে আবার সম্পর্ক করে আর তাকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে যায়। যদিও ঐ মহিলার স্বামী আর ২ বাচ্চা আছে, তবুও সে আমার স্বামীর সাথে সম্পর্ক করেছে। কিন্তু আমি যখন এই বিষয়টা জানতে পারি তখন আমার স্বামী আমার কাছে ক্ষমা চায় আর এসব পাপ থেকে সরে দাঁড়ায়। আমিও বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়ে তাকে মেনে নিয়েছিলাম, যদিও মন থেকে কোনদিন মাফ করিনি।

কিন্তু এখন আর মানতে পারছিনা। কারণ এখন আর সে তার পাপের কথা স্বীকার করেনা। এমন ভাব করে যেন কিছুই করেনি। আমার গায়ে হাতও তোলে। পর্ন মুভি দেখে, সিগারেট খায়। যেগুলো আমি খুবই অপছন্দ করি সেগুলো করে আর খুব মিথ্যা বলে। শেষ পর্যন্ত আমরা ডিভোর্স নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি যদিও দুই পরিবারের কেউ চায়না, কিন্তু আমরা দুজন চাই। আপু এখন কী করবো? কী করলে বাচ্চাটা আমার কাছে থাকবে? কারণ সে কোন অবস্থাতেই বাচ্চা দিবেনা। আমি অনার্স পাশ কিন্তু কোন জব করিনা। দেন মোহর কীভাবে পাবো? কী করবো বুঝতে পারছিনা। চোখে কেবল অন্ধকার দেখছি আপু। আমার বাচ্চাটার মানসিক অবস্থা কেমন হবে যদি আমরা আলাদা হয়ে যাই? ওর কাছে ফিরে গেলেও কোনদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবোনা। আত্মসম্মানে লাগছে। বাচ্চাটার কথা ভাববো নাকি নিজের আত্মসম্মানের কথা ভাববো বুঝতে পারছিনা। ওর কাছে যদি যাই তবে ওর পায়ে পড়ে থাকতে হবে। কী করবো? উল্লেখ্য, এখন ওর কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক নেই।" পরামর্শ: যেহেতু আপনারা ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন এবং দুজনের কেউই পরস্পরের সাথে থাকতে চান না, সেক্ষেত্রে জোর করে সম্পর্ক ধরে রাখতে চাওয়া অর্থহীন। কারণ আপনি থাকতে চাইলেও আপনার স্বামী তো আর আপনার সাথে থাকতে চান না, তাই না? তবে আপু, মানুষ মাত্রই অনেক রকমের দোষ থাকে। সিগারেট বা পর্ণ আসক্তি খুব সাধারণ সমস্যা, অনেক ছেলেরই আছে। এটা থেকে একদিনে সরিয়ে আনা যায় না। আস্তে আস্তে ভালবাসার মাধ্যমে, কখনও থেরাপির মাধ্যমে সরিয়ে আনা সম্ভব। আপনি একটি জিনিস ভুলে যাচ্ছেন যে তিনি কিন্তু আপনার ও বাচ্চার খাতিরে সবকিছু থেকে সরেই এসেছিলেন। আপনার তখন উচিত ছিল বিষয়টি মনের মাঝে চাপা দিয়ে স্বামীকে এত ভালবাসা দেয়া যে তিনি যেন অতীতকে ভুলে যেতে পারেন। ওই মেয়েটির স্মৃতি যেন তার মন থেকে মুছে যায়।

আমার মনে হচ্ছে সেটা আপনি করতে পারেন নি। বরং মানুষটিকে দোষারোপ করে যাচ্ছেন। এখন একটা মানুষকে ক্রমাগত দোষারোপ করতে থাকলে তার মন বিরূপ হয়ে যেতে বাধ্য। এই অপরাধবোধে ক্রমাগত ভোগার ব্যাপারটি কোন মানুষই বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারে না। তাই আমার মনে হয়, আপনি নিজের ইগো একপাশে সরিয়ে আরেকবার ভেবে দেখার চেষ্টা করতে পারেন। কারণ এটা ভুলে গেলে চলবে না যে আপনার স্বামীর কিন্তু এখন আর কারো সাথে পরকীয়া নেই। তবে হ্যাঁ, গায়ে হাত তোলাটা অনেক বড় সমস্যা। সেই সমস্যার সমাধান না হলে একসাথে থাকা অর্থহীন। আপনি ভেবে দেখুন ডিভোর্সের পর পরিবার আপনার দায়িত্ব নেবে কিনা। কারণ দেনমোহরের টাকায় তো জীবন চলবে না। সন্তানের বয়স যেহেতু কম, কেস করলে সন্তানকে আপনিই পাবেন। আর দেনমোহর আপনার অধিকার, এটা থেকে কেউ আপনাকে বঞ্চিত করতে পারবে না। আপনি একজন ভালো আইনজীবীর সাথে কথা বলুন এই ব্যাপারে । সন্তান ও অন্যান্য ব্যাপারে তিনি আপনাকে সঠিক পরামর্শ ও সব রকমের সাহায্য করতে পারবেন। তবে এটাই বলব আপু যে খুব আবেগের জায়গা থেকে না ভেবে, কিছুক্ষণের জন্য মস্তিষ্ক দিয়ে ভাবুন। বিশেষ দ্রষ্টব্য আমি কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক বা আইনজীবী নই। কেবলই একজন সাধারণ লেখক আমি, যিনি বন্ধুর মত সমস্যাটি শুনতে পারেন ও তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু পরামর্শ দিতে পারেন। পরামর্শ গুলো কাউকে মানতেই হবে এমন কোন কথা নেই। কেউ যদি নতুন কোন দিক নির্দেশনা পান বা নিজের সমস্যাটি বলতে পেরে কারো মন হালকা লাগে, সেটুকুই আমাদের সার্থকতা। সূত্রঃ প্রিয়