রমনা থানার পাশ দিয়ে যাবেন, আর খাবারের গন্ধ পাবেন না! সেটা তো বিশ্বাস করা মুশকিল। কারণ, রমনা থানার পাশেই তো ফখরুদ্দিন রেস্তোরাঁর কারখানা। ঢাকা শহরজুড়ে থাকা ফখরুদ্দিন রেস্তোরাঁর বিখ্যাত বিিরয়ানিসহ সব খাবারই রান্না হয় এই কারখানায়। যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৬৬ সালের দিকে ভিকারুননেসা নূন স্কুলের ক্যানটিনে। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত শুধু ঢাকাবাসী নয়, ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানির স্বাদ পৌঁছে গেছে জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর হয়ে জর্ডানের রাজপরিবারের হেঁেশলেও। ঢাকার এই বিরিয়ানির স্বাদ জর্ডানের রাজপরিবারের বিয়েসহ নানা অনুষ্ঠানে এখন ‘কমন’ বিষয়। ফখরুদ্দিন বাবুর্চি মারা গেলেও ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানি বা খাবারের স্বাদ আছে ঠিক আগের মতোই। কীভাবে রান্না হয় ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানি, গরুর রেজালা বা আলুবোখারার চাটনি? প্রথম আলোর পাঠকদের কোরবানির আগেই সেই গোপন রেসিপি দিতে রাজি হলেন ফখরুদ্দিন বাবুর্চির ছেলে, ফখরুদ্দিন রেস্তোরাঁর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিক।
বিরিয়ানিতে স্বাদবদল চান? তাও পাবেন। রইল হাজির বিরিয়ানির রেসিপি। প্রতিদিন দুপুর থেকেই ভোজনরসিকদের লম্বা লাইন পড়ে কাঁঠালপাতার ঠোঙায় করে এই বিরিয়ানি নিেয় যাওয়ার জন্য। হাজির বিরিয়ানির এখনকার পরিচালক হাজি মোহাম্মদ শাহেদ হোসেন জানিয়েছেন তাঁদের বিরিয়ানি তৈরির পদ্ধতি।
মাংস রান্না করার আগে লবণ–পানিতে ভিজিয়ে রাখুন কয়েক ঘণ্টা। মাংস লবণে থাকার কারণে নরম হয়ে যাবে এবং সহজে সেদ্ধ হবে। ধুয়ে রান্না করুন।
আলু বোখারার চাটনি তৈরির পর ঠান্ডা না হলে বয়ামে ভরা ঠিক না।
গরুর মাংস রান্নার সময় বেশি বড় আকারের টুকরা করলে অনেক সময় ভেতরে মসলা ঢুকতে পারে না। তাই ছোট ছোট টুকরা করুন।
আলুবোখারা চাটনি
উপকরণ: তেঁতুল ১ কেজি, আলুবোখারা ২ কেজি, কিশমিশ ৫০০ গ্রাম, আখের গুড় ২ কেজি, চিনি ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম, টমেটো সস মাঝারি ২ বোতল, হলুদ দুই চা–চামচ, মরিচ গুঁড়া দুই চা–চামচ, পাঁচফোড়ন ১ চা–চামচ, সয়াবিন তেল ২৫০ গ্রাম।
প্রণালি: দুই থেকে তিন কেজি পানিতে তেঁতুল ভিজিয়ে রেখে দিন ঘণ্টা তিনেক। এরপর তেঁতুল কচলে বিচি ফেলে দিন। আখের গুড় গুঁড়া করে নিন। এবার পাত্রে তেল দিয়ে পাঁচফোড়ন দিয়ে নাড়ুন। এবার পাঁচফোড়নে তেঁতুল ঢেলে দিন। একে একে টমেটো সস, গুড় ও চিনি ঢেলে দিন। এবার কিশমিশ ও আলুবোখারা দিয়ে নাড়তে থাকুন। ঘন হয়ে এলে নামিয়ে নিন। ঠান্ডা করে বয়ামে ভরে নিন।
উপকরণ: খাসির মাংস ৬ কেজি (প্রতি কেজিতে ৮ থেকে ১০ টুকরা হবে), লবণ ২৫০ গ্রাম বা কিছুটা বেশি, আদা বাটা ১ কাপ, রসুন বাটা ১ কাপ, দই ২ কাপ, জর্দার রঙ বা জাফরান ২ গ্রাম, দারুচিনি ও এলাচি গুঁড়া দুই চা–চামচ করে, লবঙ্গ কয়েকটা, জয়ত্রী ২ চিমটি, শাহী জিরা আধা চা–চামচ, আস্ত দারুচিনি ও লবঙ্গ কয়েকটা, কাবাব চিনি ১ চা–চামচ, সাদা গোলমরিচের গুঁড়া ২ চা–চামচ, পেস্তা বাদাম ৫০ গ্রাম, তেজপাতা ৫ থেকে ১০টা, গোল আলু ১০টা (প্রতিটা ৪ টুকরা), পেঁয়াজ বেরেস্তা পরিমাণমতো, কালিজিরা চাল ৩ কেজি।
প্রণালি: মাংস ধুয়ে নিন। এবার দইয়ের মধ্যে দারুচিনি ও এলাচি গুঁড়া, জর্দার রং মিশিয়ে দইটা মাংসে মেশান। এরপর জয়ত্রী, সাদা গোলমরিচ, আদা-রসুন বাটাসহ বাকি সব মসলা মাংসে মেশান। চালটা আলাদা সেদ্ধ করে নিন। পেঁয়াজ বেরেস্তা করে নিন। আলুর টুকরাগুলো ভেজে নিন। এবার মসলা মাখানো মাংস রান্নার হাঁড়িতে ঢেলে সাজিয়ে নিন। তার ওপর ভাজা আলু ও পেঁয়াজ বেরেস্তা ছড়িয়ে দিন। এবার মাংসের ওপরে সেদ্ধ চাল সমান করে বিছিয়ে নিন। হাঁড়ির নিচে আগুন ও কয়লার দম দিন। হাঁড়ির মুখে ঢাকনা দিয়ে চারপাশ আটা দিয়ে বন্ধ করে দিন। তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি।
গরুর রেজালা
উপকরণ: গরুর মাংস ৫ কেজি, তেল ৫০০ গ্রাম, লবণ ১০০ গ্রাম, আদা বাটা ১০০ গ্রাম, রসুন বাটা ১০০ গ্রাম, পেঁয়াজ ১ কেজি, শুকনা মরিচ বাটা ১০০ গ্রাম, হলুদ ৫ গ্রাম, দারুচিনি ২৫ গ্রাম, এলাচি ১০ গ্রাম, সাদা গোল মরিচ গুঁড়া ১০ গ্রাম, জয়ফল ২টা, জয়ত্রী সামান্য, তেজপাতা ৫-৭টা, টক দই ২০০ গ্রাম, জিরা ৫০ গ্রাম।
প্রণালি: গরুর মাংস প্রতি কেজিতে ১৬ থেকে ১৮ টুকরা করে কেটে ধুয়ে নিন। এবার তেলসহ সব ধরনের মসলা দিয়ে মাখিয়ে নিন। এরপর টক দই দিয়ে আবার মাখান। এবার চুলায় দিয়ে কষিয়ে নিন। মাংস কষানো হলে আলাদা একটা ঘ্রাণ আসবে। এরপর দারুচিনি, গোল মরিচের গুঁড়া, জিরা, এলাচি গুঁড়া ইত্যাদির সঙ্গে একটু পানি দিয়ে নেড়ে নিন। কয়েক মিনিট পর চুলার আঁচ কমিয়ে দমে দিয়ে রাখুন। মাটির চুলা হলে কয়লায় দম দিতে পারেন। এতে মাংস নরম হবে।
সংকলন - প্রথম আলো অনলাইন