চলতি অর্থবছরের বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশ ও আয়কর বিধিমালা ১৯৮৪ সংশোধন করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আয়করের আওতাভুক্ত সরকারি চাকরিজীবীদের (পিআরএলভুক্ত কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ) মাসিক বেতন থেকে ব্যক্তিগত আয়কর কাটার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জুলাই থেকে এ আয়কর কাটা শুরু হয়েছে।
এলাকা ও লিঙ্গভেদে চাকরিজীবীদের জন্য করের পরিমাণ আলাদা আলাদা। যদিও এ নিয়ম আগেও ছিল। এ ক্ষেত্রে একই গ্রেডের কর্মী হলেও ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে কর্মরতদের সবচেয়ে বেশি কর দিতে হবে। এর পরেই রয়েছে অন্যান্য সিটি করপোরেশনে কর্মরত কর্মীরা। সবচেয়ে কম কর পরিশোধ করতে হবে সিটি করপোরেশনের বাইরে কর্মরত কর্মীদের। যেমন ১৬ হাজার থেকে ২৯ হাজার ৯৯৯ টাকার স্কেলে যেসব পুরুষ কর্মী আছেন, তাদের মধ্যে যারা ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে কর্মরত তাদের মাসিক বেতন থেকে আয়কর বাবদ ৪১৭ টাকা কাটা হবে। একই গ্রেডের যারা অন্যান্য সিটি করপোরেশনে কর্মরত আছেন তাদের বেলায় কাটা হবে ৩৩৩ টাকা। আর সিটি করপোরেশনের বাইরে কর্মরত কর্মীদের বেলায় তা কাটা হবে ২৫০ টাকা। নারী কর্মীদের নূ্যনতম স্কেল ১৯ হাজার ৪৬০ টাকা না হলে তার থেকে আয়কর কাটা হবে না। তবে সর্বোচ্চ বেতনধারীদের অর্থাৎ যাদের স্কেল ৮৭ হাজার টাকার বেশি, তাদের বেলায় পুরুষ-নারীদের ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য নেই।
সর্বশেষ অর্থবিল অনুযায়ী, ব্যক্তিশ্রেণির পুরুষ করদাতার আয় আড়াই লাখ এবং নারী করদাতার আয় তিন লাখ টাকা করমুক্ত আয় হিসেবে নির্ধারিত। ফলে বার্ষিক মূল বেতন, উৎসব ভাতা ও বোনাসসহ মোট আয়ের পরিমাণ পুরুষ কর্মীর বেলায় আড়াই লাখ ও নারী কর্মীর বেলায় তিন লাখ টাকার বেশি হলে তাদের মাসিক বেতন থেকে আয়কর কাটা হবে।
এভাবে বছরব্যাপী আয়কর দেওয়ার পর কোনো কর্মীর দেওয়া মোট করের পরিমাণ নূ্যনতম আয়কর অপেক্ষা বেশি হলে আয়কর পরিশোধ হয়েছে গণ্য হবে। তবে নূ্যনতম করের চেয়ে কম হলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় কর্মরতদের পাঁচ হাজার, অন্যান্য সিটি করপোরেশনে কর্মরতদের চার হাজার এবং সিটি করপোরেশনের বাইরে কর্মরতদের তিন হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। আয়কর নিরূপণের ক্ষেত্রে একজন কর্মীর মূল বেতন, উৎসব ভাতা, বৈশাখী ভাতা ও বোনাসের পরিমাণ হিসাব করা হবে। এ ছাড়া কর্মীদের অনুমোদিত বিনিয়োগ খাতে সংশ্লিষ্ট কর বছরে বিনিয়োগ হিসেবে যোগ হবে। তবে মোট করযোগ্য আয়ের ২৫ শতাংশ অনুমোদিত খাতে বিনিয়োগ করা হলে সে অর্থের ওপর ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১২ শতাংশ এবং অবশিষ্ট আয়ের ওপর ১০ শতাংশ কর রেয়াত পাওয়া যাবে। মাসিক বেতন থেকে আয়কর কাটার পাশাপাশি বকেয়া আয়করও কাটা হবে। কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর আয়কর কাটা না হলে অথবা কেটে নেওয়া আয়কর প্রধান কার্যালয়ে জমা না হলে সংশ্লিষ্ট কর্মীর অনুকূলে কর পরিশোধ প্রত্যয়ন পত্র ইস্যু স্থগিত থাকবে। কোনো কর্মী এক অফিস থেকে অন্য অফিসে বদলি হলে সর্বশেষ অফিসে কেটে নেওয়া আয়করের হিসাব নতুন অফিসে স্থানান্তর করতে হবে। সব করদাতা কর্মীর ইটি আইন থাকা বাধ্যতামূলক।