জাহিদুর রহমান তারিক,ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক ঘুষ বানিজ্যের পর এবার কর্মক্ষেত্রে হয়রানী, উত্যক্তসহ যৌন নিগ্রহের অভিযোগ করেছেন একই অফিসের অফিস সহকারী রুখসানা আফরিন।
পাসপোর্ট অফিসের মহাপরিচালকের বরাবর অভিযোগ করার পর বিষয়টি বুধবার তদন্তে আসেন প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (সংস্থাপন) নাসরিন পারভিন নুপুর। বুধবার দুপুর থেকে অফিসের সব কাজ বন্ধ করে তদন্ত করা হয়।
এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা নাসরিন পারভিন নুপুর অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেন। তদন্তকালে উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা পান।
পাসপোর্ট অফিসের মহাপরিচালকের বরাবর লিখিত অভিযোগে রুখসানা আফরিন উল্লেখ করেন, ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যোগদানের পর থেকেই উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকার তাকে মানসিক ভাবে নির্যাতন করে আসছেন। আমি নিজের সংসার ও মান সন্মানের দিকে তাকিয়ে তাকে সংশোধন হওয়ার অনুরোধ করি। কিšু‘ তিনি আমাকে অব্যাহত ভাবে আপত্তিকর ও অনৈতিক প্রস্তাব দিতে থাকেন।
অফিস শেষ করে বাসায় গেলে তিনি রাতে তার বাসায় আসার প্রস্তাব দেন। যা আমার জন্য খুবই লজ্জা ও মানসিক যন্ত্রানার। সর্বশেষ গত ১১ জুলাই তিনি আমাকে আপত্তিকর প্রস্তাব দিলে আমি এর প্রতিবাদ করি। প্রতিবাদ করায় তিনি আমাকে অফিসিয়াল ভাবে ক্ষতি করার হুমকী দেন। তার কু প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত ৭ আগষ্ট তিনি আমাকে বিনা অপরাধে শোকজ করেন। ৯ আগষ্ট আমি তার চিঠির উত্তর দিলে তিনি সন্তোষজনক হয়নি বলে চিঠি ফেরৎ দেন।
এরপর তিনি আমাকে হুমকী ও চাপ প্রয়োগ করে চিঠি সংশোধন করে তার মতো করে জবাব প্রদানে বাধ্য করেন। ফলে আমি এখন স্বাভাবিক ভাবে অফিস করতে পারছি না। আমাকে হুমকী দেওয়া হচ্ছে। অফিসের কর্মচারীরা জানান, উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকার লম্পট প্রকৃতির মানুষ। মহিলা পাসপোর্ট গ্রহিতা তার কাছে আসলে বিনা বাক্যে এবং কোন ভুল ছাড়াই পাসপোর্ট করে দেন। তকার দুর্ব্যাবহারে পাসপোর্ট গ্রহিতারা অতিষ্ঠ।
প্রতিদিন তিনি পাসপোর্ট প্রতি ৯’শ টাকা ঘুষ আদায় করেন বলেও কথিত আছে। টাকা না দিলে দিনের পর দিন ঘোরানো হয়। ইমার্জেন্সি পাসপোর্ট করতে গেলে সরকারী ফি বাদেও ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে চাকলা পাড়ার এক যুবক অভিযোগ করেন।
গত ৩১ মে তার কাছ থেকে ২১ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। সুত্রমতে ইমার্জেন্সি পাসপোর্টের টাকা নিয়ে এক মাসের চালান জমা দেওয়া হয়। মহেশপুর এলাকার একাধিক ব্যক্তি এই অভিযোগ করেন। দ্রুত পাসপোর্ট প্রদানের কথা বলে ২০/২৫ দিন পর দেওয়া হয়।
কোটচাঁদপুরের লক্ষিপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান অভিযোগ করেন, পাসপোর্ট করতে এসে তিনি ঘুষ না দেওয়ায় দুই সপ্তাহ ঘুরেছেন। ঘুষ না দিলে এ ভুল সে ভুল ধরে পাসপোর্ট গ্রহিতাদের চরম ভাবে হয়রানী করা হয় বলেও তিনি জানান।
এ সব কারণে স্থানীয় এক সংসদ সদস্যের আত্মীয়ের তাতে উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকার লাঞ্চিত হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে পাসপোর্ট অফিসে প্রতিবাদ করলে ডিবি পুলিশের ভয় দেখানো হয়।
বুধবার তার বিরুদ্ধে তদন্ত ও ঘুষ দুনীতির বিষয়ে উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকার জানান, প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (সংস্থাপন) নাসরিন পারভিন নুপুর নিয়মিত ভিজিটে এসেছিলেন। তার বিরুদ্ধে কেও কোন অভিযোগ করেনি। এ সব মিথ্যা এবং বানোয়াট। তিনি ব্যস্ততার অজুহাতে ফোনের লাইন কেটে দেন।
প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (সংস্থাপন) নাসরিন পারভিন নুপুর ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করে উপরে রিপোর্ট দিবেন।