আপনি আছেন » প্রচ্ছদ » খবর

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

ত্রয়োদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার্থীরা প্রস্তুতির জন্য আরো ১ সপ্তাহ বেশি সময় পেলেন আবেদনকারীরা। পরিবর্তিত নতুন তারিখ অনুযায়ী আগামী ১৩ মে মুখোমুখি হতে হবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) পরীক্ষা মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন সদস্য (যুগ্ম সচিব) মো. হুমায়ূন কবীর দৈনিকশিক্ষাকে জানান, এবার ৬ লাখ ২ হাজার ৩৩ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, দ্বাদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা থেকেই পরীক্ষা পদ্ধতির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এবার পরিবর্তন হয়েছে নিয়োগ পদ্ধতিতেও। এরই ধারাবাহিকতায় ত্রয়োদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রথমে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ১৩ মে স্কুল ও স্কুল-২ অনুষ্ঠিত হবে। কলেজ পর্যায়ের প্রিলিমিনারি পরীক্ষাও ১৩ মে অনুষ্ঠিত হবে। স্কুলের পরীক্ষা হবে ৪টা থেকে ৫টা আর কলেজের পরীক্ষা হবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় যাঁরা উত্তীর্ণ হবেন, শুধু তাঁরাই লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। আর লিখিত পরীক্ষা স্কুল ও স্কুল-২ পর্যায়ের প্রার্থীদের পরীক্ষা আগামী ১২ আগস্ট এবং কলেজ পর্যায়ের প্রার্থীদের পরীক্ষা ১৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে। উভয় পর্যায়ের পরীক্ষা হবে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। হুমায়ূন কবীর বলেন, বিগত বছরের মতো এবারও প্রার্থীদের এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষার সময় থাকবে ১ ঘণ্টা। বিষয় থাকবে মোট ৪টি। বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান। প্রতিটি বিষয়ে ২৫টি করে মোট ১০০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য শূন্য দশমিক ৫০ নম্বর কাটা হবে। এরপর প্রার্থীদের ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। উভয় পরীক্ষার পাস নম্বর ৪০। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের পরবর্তী সময়ে এসএমএসের মাধ্যমে মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ও সময় জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান হুমায়ূন কবীর। তাই হাতে আর মাত্র পাবেন কয়েকটি দিন। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে আপনিও পেতে পারেন শিক্ষক নিবন্ধনের সনদ। নতুন পদ্ধতিতে এই সনদ দিয়ে এনটিআরসিএ বরাবর অনলাইনে আবেদন করে মেধাতালিকার ভিত্তিতে যেকোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়া যাবে।

বাংলা

স্কুল ও স্কুল-২ পর্যায়ে বাংলা অংশে ভালো করতে হলে ব্যাকরণে জোর দিতে হবে বলে জানান মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক সানজিদা খাতুন। তিনি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় স্কুল ও কলেজ উভয় পর্যায়েই উত্তীর্ণ হন। তিনি বলেন, ব্যাকরণের প্রায় প্রতিটি অধ্যায় থেকে এক থেকে দুটি প্রশ্ন আসে। এসব অধ্যায়ের মধ্যে ভাষারীতি ও বিরাম চিহ্নের ব্যবহার, বাগধারা ও বাগবিধি, ভুল সংশোধন বা শুদ্ধকরণ, অনুবাদ, সন্ধি বিচ্ছেদ, কারক, বিভক্তি, সমাস ও প্রত্যয়, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ, বাক্য সংকোচন, লিঙ্গ পরিবর্তন অধ্যায়গুলো ভালোভাবে পড়লে প্রশ্ন পাওয়া যাবে। আর কলেজ পর্যায়ের জন্য পড়তে হবে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবইগুলো। এসব বইয়ের গদ্য ও পদ্যের লেখক পরিচিতি সম্পর্কে জানা থাকলে ভালো করা যাবে। এ ছাড়া বিগত বছরগুলোর শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্নগুলোর সমাধান করলেও বেশ কাজে দেবে।

গণিত

প্রভাষক সানজিদা খাতুনের মতে, অনেকেই গণিতে খারাপ করে। গণিতে ভালো করতে হলে সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির বইগুলো বারবার চর্চা করতে হবে। পাটিগণিত থেকে লসাগু, গসাগু, ঐকিক নিয়ম, শতকরা, সুদকষা, লাভ-ক্ষতি, অনুপাত-সমানুপাত—এসব অধ্যায় ভালো করে চর্চা করলে প্রশ্ন পাওয়া যাবে। আর বীজগণিতের জন্য করতে হবে উৎপাদক, বর্গ ও ঘনসংবলিত সূত্রগুলো ও প্রয়োগ, গসাগু, সূচক, লগারিদম—এসব অধ্যায় থেকে প্রতিবছরই প্রশ্ন থাকে। জ্যামিতির জন্য রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, ক্ষেত্রফল ও বৃত্ত অধ্যায়গুলো আয়ত্তে রাখা দরকার। বিগত বছরগুলোর বিসিএস প্রশ্ন ও শিক্ষক নিবন্ধন প্রশ্নগুলো বারবার চর্চা করলেও ভালো করা যাবে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য শূন্য দশমিক ৫০ নম্বর কাটা হয়। তাই প্রতিটি উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে।

ইংরেজি

ফেরদৌসি সুমি, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের ইংরেজির সহকারি শিক্ষক। ৩য় নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ তিনি। তাঁর মতে, ইংরেজি বিষয়ে ভালো করতে হলে বেশি করে পড়তে হবে গ্রামারের খুঁটিনাটি। এ অংশে ভালো করতে হলে গ্রামার অংশকে গুরুত্ব দিতে হবে। এই গ্রামার অংশ থেকেই স্কুল ও কলেজ উভয় পর্যায়েই প্রশ্ন আসে। Completing Sentences, Translation from Bengali to English, Change of parts of speech, Right forms of verb, Fill in the blanks with appropriate word, Transformation of sentences, Synonyms and Antonyms, Idioms and Phrases, Article এই অধ্যায়গুলো মনোযোগসহকারে পড়লে প্রশ্ন পাওয়া যাবে। এসব অধ্যায়ের উপাদানগুলো বারবার চর্চা করলে ভালো করা যাবে।

সাধারণ জ্ঞান

অষ্টম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করেছেন মো. শহিদুর রহমান। সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এই বিষয়ে ২৫টি প্রশ্ন থাকবে। এ অংশে ভালো করতে হলে প্রয়োজন নিয়মিত পত্রিকা পড়া, দেশি-বিদেশি সমসাময়িক খবরগুলো নিজের আয়ত্তে করে নেওয়া। বিজ্ঞান, তথ্য ও প্রযুক্তি, পরিবেশ এবং রোগব্যাধি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। বাংলাদেশ অংশে বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, জলবায়ু, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, বিভিন্ন জেলার আয়তন, অর্থনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত থাকা দরকার। আর আন্তর্জাতিক অংশের জন্য বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, দিবস, পুরস্কার ও সম্মাননা, সাম্প্রতিক ঘটনা—এসব থেকে দু-চারটি প্রশ্ন পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া বাজারে সাধারণ জ্ঞানের বিভিন্ন প্রকাশনীর বইগুলো পড়লেও ভালো করা যাবে।

লিখিত পরীক্ষা

প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ঐচ্ছিক বিষয়ের ওপর ১০০ নম্বরের ৩ ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। লিখিত পরীক্ষার জন্য এনটিআরসিএ কর্তৃক প্রদত্ত সিলেবাস দেখে নিতে পারেন। স্কুল পর্যায়ের জন্য নবম-দশম শ্রেণির বইগুলো পড়তে হবে এবং কলেজ পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হলে প্রার্থীর অনার্স পর্যায়ের বইগুলো পড়লেই চলবে। এ ছাড়া বিগত বছরের প্রশ্নগুলো দেখলেও ধারণা পাওয়া যাবে। প্রতিটি প্রশ্নেরই বিকল্প প্রশ্ন থাকবে। তাই একটি না পারলে অন্যটি উত্তর দেওয়া যাবে।