মানুষের সৌন্দর্যের প্রশ্নে প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সুন্দর একটি মুখমণ্ডলের প্রতিচ্ছবি। আর এ মুখমণ্ডলের সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ হচ্ছে এক জোড়া ঠোঁট। সবার কাছেই সুন্দর ঠোঁটের আকর্ষণ অনেক বেশি। ঠোঁট আকর্ষণীয় না হলে সৌন্দর্যের অনেক কিছুতেই ভাটা পড়ে যায়। কারণ চেহারার সৌন্দর্যে সজীব ও রাঙা ঠোঁটের হাসিটাও বিরাট ভূমিকা রাখে। তাই ঠোঁট দুটি হবে আকর্ষণীয় ও দেখার মতো এটাই সবার কামনা। সে জন্য নিয়মিত নিতে হবে ঠোঁটের যত্ন।
ঠোঁট সবসময়ই হওয়া উচিত কোমল, মসৃণ এবং স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আর্দ্র। ঠোঁট শুকিয়ে গেলে ফেটে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ঠোঁটের চামড়ায় দাগ পড়ে। এ অবস্থায় লিপস্টিক লাগালে ভালো দেখায় না। ঠোঁটের জন্যে প্রয়োজন তাই পরিচর্যার। অতিরিক্ত গরম কিংবা ঠান্ডা আবহাওয়া ঠোঁটের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। তখন ঠোঁট শুকিয়ে যেতে পারে। তাই ঠোঁটের সৌন্দর্য বজায় রাখতে একটু বেশি সচেতন হতে হবে। ঠোঁট সুন্দর, আকর্ষণীয় করতে হলে নিয়মিত ঠোঁটের যত্ন নিতে হবে। ঠোঁটের সৌন্দর্যে করণীয়-
ঠোঁটের যত্নে যা করবেন
১. প্রতিদিন কুসুম গরম পানি দিয়ে ঠোঁট পরিষ্কার করে তাতে কোনো ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম অথবা চ্যাপস্টিক লাগিয়ে রাখুন। এছাড়া রাতে ঘুমোনোর আগে গোলাপ জলে মেশানো গ্লিসারিন পানি ঠোঁটে লাগিয়ে শুতে পারেন অথবা ভালো পেট্রোলিয়াম জেলির প্রলেপ লাগিয়ে নিতে পারেন।
গ্লিসারিন পানি তৈরির নিয়ম : সমপরিমাণ গ্লিসারিন ও গোলাপ জল অথবা খাবার পানি মিশিয়ে নিলেই হলো। তবে একবারে বেশি পরিমাণে বানাবেন না। নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই অল্প অল্প করে বানিয়ে ব্যবহার করবেন।
২. সম্ভব হলে ঠোঁটে দুধের সর ও চিনি মিশিয়ে গলে না যাওয়া পর্যন্ত ম্যাসাজ করে নিতে পারেন। তাতে ঠোঁট অনেকটা সজীব দেখাবে।
৩. সপ্তাহে দু’এক দিন ঠোঁট জোড়া ব্রাশ করে নেবেন। তাতে ঠোঁটের মরা কোষগুলো ঝরে যাবে।
৪. ঠোঁট কামড়ানো ও জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজানো পরিহার করুন।
৫. যাদের ঠোঁট ঘন ঘন শুকিয়ে যায় বা ফেটে যায়, তারা ভ্যাসলিন বা অ্যালোভেরা জেল লাগাতে পারেন। তবে ঠোঁটে ভ্যাসলিন লাগিয়ে কখনোই রোদে যাবেন না। তাতে ঠোঁট কালো হয়ে যেতে পারে।
৬. রোদে বের হওয়ার সময় ঠোঁটে কিছুটা নারিকেল তেল নিন। এরপর চাইলে লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। তবে যে লিপস্টিকই ব্যবহার করুন না কেন, সেটা যেন অবশ্যই ভালো ব্র্যান্ডের হয়। কেননা, লিপস্টিকের কারণে ঠোঁটে অ্যালার্জিসহ নানাবিধ ক্ষতি হতে পারে।
৭. রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ক্রিম বা তুলা দিয়ে লিপস্টিক তুলে ফেলে একটু ভ্যাসলিন লাগিয়ে নিন। নিয়মিত লিপজেল বা চ্যাপস্টিক ব্যবহার করুন। তবে অধিক সুগন্ধিযুক্ত লিপজেল বা চ্যাপস্টিক ব্যবহার না করাই ভালো। অতিরিক্ত প্রসাধনী ঠোঁটকে শুষ্ক করে তোলে। তাই সাময়িক সৌন্দর্যের জন্য অপ্রয়োজনীয় প্রসাধনী ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৮. প্রতিবার দাঁত মাজার সময় টুথপেস্ট আমাদের ঠোঁট স্পর্শ করে। তাই টুথপেস্টটিও হওয়া চাই ভালো কোম্পানির ও নিরাপদ।
৯. এ ছাড়া সাবান এবং ফেসওয়াশ একদম ঠোঁটে লাগাবেন না।
১০. ঠোঁটের কোনা ফাটা রোধ করতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘বি’ ও ‘সি’ জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন।
১১. দিনে দু’বারের বেশি চা-কফি খাওয়া উচিত নয়।
১২. একটা লেবুর অর্ধেকটা কেটে তার উপর দু’ফোটা মধু ফেলে বৃত্তাকারে ঠোঁটে ম্যাসাজ করুন। এতে করে ঠোঁটের কালো ভাব দূর হবে।
১৩. বিভিন্ন ঋতুতে আবহাওয়ার অত্যাচার থেকে ঠোঁটকে রক্ষা করতে হলে সবুজ শাক-সবজি, ফল ও প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।
১৪. সানস্ক্রিন লিপ গ্লস ব্যবহার করতে পারেন সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ঠোঁটকে রক্ষা করতে।
ঠোঁটে মেক-আপের পদ্ধতি-
ঠোঁট যেমন সরু, মোটা, চ্যাপটা- বিভিন্ন ধরনের তেমনি লিপস্টিক লাগানোর কায়দাও বিভিন্ন।
লিপস্টিক লাগানোর সময় প্রথমে ঠোঁটে একটু পাউডার লাগিয়ে নিলে ভালো হয়। তারপর লিপ পেন্সিল দিয়ে হালকা করে আউট লাইন এঁকে নিন। তারপর ঠোঁটের মধ্যভাগ লিপ ব্রাশের সাহায্যে লিপস্টিক লাগিয়ে ভরে দিতে পারেন অথবা সরাসরি লিপস্টিক দিয়েও ভরে নিতে পারেন। এরপর একটা টিস্যু পেপার দিয়ে চেপে অতিরিক্ত লিপস্টিকের রং তুলে ফেলুন। গ্রীষ্মে দিনের বেলায় কটকটে কড়া রঙের লিপস্টিক লাগানো উচিত নয়। তবে তা রাতে ব্যবহার করতে পারেন- পার্টি বা যেকোনো অনুষ্ঠানে।
পাতলা ঠোঁটের জন্য
পাতলা ঠোঁট ভরাট দেখানোর জন্য ঠোঁটের প্রকৃত সীমারেখার ঠিক বাইরে আউট লাইন এঁকে নিন হালকা রঙের লিপস্টিক দিয়ে লিপ ব্রাশের সাহায্যে। এখন গাঢ় রঙের লিপস্টিক আউটলাইন বরাবর সারা ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট অনেক ভরাট দেখাবে।
দুইকোণা চাপা ভরাট ঠোঁটের জন্য
যাদের ঠোঁট এরকম তারা সব-সময় হালকা রঙের লিপস্টিক লাগাবেন। এছাড়া যে রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করতে চান সেই লিপস্টিক লিপব্রাশে দুইকোণ বাড়িয়ে মানানসই আউট লাইন আঁকুন। এবার মাঝারি বা হালকা রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করে ঠোঁট ভরাট করুন। এভাবে করলে উজ্জ্বল গাঢ় রঙের লিপস্টিক ও লিপগ্লস লাগাবেন।
ফোলা ঠোঁটের জন্য
যাদের ঠোঁট ফোলা ধরনের তারা ঠোঁট মানানসই করার জন্যে ঠোঁটের প্রকৃত সীমারেখা বরাবর বা সামান্য কমিয়ে আউট লাইন আঁকুন। ঠোঁটের দু’কোণায় আউট লাইন মেলাবে না, সামান্য ফাঁক রাখবেন। এবার গাঢ় বা মাঝারি রঙের লিপস্টিকে ঠোঁট ভরাট করুন। ভরাট ঠোঁটে কখনো লিপগ্লস ব্যবহার করবেন না।
প্রসারিত ঠোঁটের জন্য
প্রসারিত ঠোঁটের জন্য আউট লাইন আঁকুন হালকা রঙের লিপস্টিক লিপ ব্রাশ দিয়ে। দুই কোণায় সামান্য ফাঁক রাখবেন। যে রঙের লিপস্টিক দিয়ে ঠোঁট ভরাট করুন না কেন, তা ঠোঁটের মাঝের অংশে লাগান গভীর করে ও দুই পাশে লাগান অপেক্ষাকৃত হালকা করে।
লিপগ্লসের ব্যবহার-
এখন লিপগ্লাসের ব্যবহার বেশি হচ্ছে। গরমের দিনে দিনের বেলা হালকা লিপগ্লসের আবেদন বেশি। গাঢ় রঙের লিপগ্লস রাতে ব্যবহার করা ভাল। লিপগ্লসের রঙ বেছে নেবেন মূল লিপস্টিকের রঙের কাছাকাছি শেডে। বর্ণহীন লিপগ্লস সব রঙের লিপস্টিকের ওপর লাগানো যায়। লিপগ্লস দুই রকমের পাওয়া যায়। স্টিক লিপগ্লস ও লিক্যুইড লিপগ্লস। স্টিক লিপগ্লস সরাসরি লিপস্টিক লাগানো ঠোঁটে লাগানো যায়। আর তুলির সাহায্যে লিক্যুইড লিপগ্লস ঠোঁটে লাগাতে হয়।