এপ্রিলের মধ্যেই ৩৮ তম বিসিএস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে আশা করছে পিএসসি
কোটা শিথিলের পক্ষে পিএসসি
৩৫তম বিসিএসের নন ক্যাডার নিয়োগে কোটাপদ্ধতি শিথিল চায় সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পিএসসি থেকে পাঠানো কোটা শিথিলের প্রস্তাবটি শিগগিরই মন্ত্রিসভায় উঠবে। সিদ্ধান্ত পেলে নন-ক্যাডারে নিয়োগ শুরু হবে।
নন-ক্যাডার নিয়োগের বাইরে বর্তমানে পিএসসিতে ৩৬ ও ৩৭তম বিসিএসের পরীক্ষা চলছে। এর মধ্যে ৩৬তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ১২ মার্চ থেকে। আজ রোববার থেকে শুরু হবে ৩৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা। আর ৩৮তম বিসিএসের শূন্য পদের চাহিদার জন্য ইতিমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এপ্রিলের মধ্যেই এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে আশা করছে পিএসসি। এই পরীক্ষা ইংরেজিতে দেওয়ার সুযোগ থাকবে। এর আগে গত বছরের আগস্টে ৩৫তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হলেও এখনো গেজেট না হওয়ায় যোগ দিতে পারছেন না উত্তীর্ণ প্রার্থীরা।
নন-ক্যাডারে কোটা শিথিলের উদ্যোগ
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ৪৫ শতাংশ মেধা ও ৫৫ শতাংশ অন্যান্য কোটা রয়েছে। প্রার্থীদের অভিযোগ, বর্তমান পদ্ধতির কারণে কোটার প্রার্থী না পাওয়া গেলে ওই পদগুলো সংরক্ষণ করা হয়। এর ফলে বঞ্চিত হন মেধাবীরা। পিএসসি বলছে, ৩৫তম বিসিএস ক্যাডার পদে সুপারিশের সময় পেশাগত ও কারিগরি ক্যাডারে কোটা সংরক্ষণ না করে সেখানে মেধাবীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে নন-ক্যাডারেও কোটা শিথিলের জন্য জনপ্রশাসনে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ১৭ আগস্ট ৩৫তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ৫ হাজার ৫৩৩ জন উত্তীর্ণ হন। এর মধ্যে ২ হাজার ১৫৮ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করা হলেও পদস্বল্পতার কারণে ৩ হাজার ৩৫৯ জনকে নন-ক্যাডারের জন্য রাখা হয়। তবে পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। অবশ্য গত নভেম্বরে নন-ক্যাডারে নিয়োগের জন্য প্রথমবারের মতো অনলাইনে আবেদনপত্র নেওয়া হয়েছে। ২ হাজার ৬২৬ জন এতে আবেদন করেছেন। তবে এখনো কাউকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়নি।
পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, ৩৫তম বিসিএসের নন-ক্যাডারে নিয়োগের জন্য ৩০ আগস্ট সব মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় পিএসসি। ইতিমধ্যে প্রথম শ্রেণির ৬২৯টি এবং দ্বিতীয় শ্রেণির ২ হাজার ৭০০ চাহিদা পাওয়া গেছে। প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের মধ্যে সমাজসেবা থেকে এবং দ্বিতীয় শ্রেণির ক্ষেত্রে এনবিআর থেকে সবচেয়ে বেশি চাহিদাপত্র এসেছে। ফলে অধিকাংশ প্রার্থীই চাকরি পাবেন বলে আশা করছে পিএসসি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আ ই ম নেছারউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এর আগে ৩৪ ও ৩৫তম বিসিএসের ক্যাডার নিয়োগের সুপারিশের সময় কোটার প্রার্থী না পাওয়ায় আমরা মেধাবীদের নিয়োগের সুপারিশ করেছি। ৩৫তম বিসিএসে প্রথমবারের মতো নন-ক্যাডার নিয়োগেও কোটাপ্রথা শিথিলের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পেলে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
পরীক্ষা কমাতে চায় পিএসসি
পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে বিসিএসের বাইরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১ হাজার ১০৪ জন নিয়োগ পেয়েছিলেন। আর ২০১৬ সালে নিয়োগ পেয়েছেন ১০ হাজার ৪৩৭ জন। আর বিসিএসসহ সব মিলিয়ে ২০১৫ সালে যেখানে ৩ হাজার ৬৯৪ জন নিয়োগ পেয়েছেন, ২০১৬ সালে সেখানে নিয়োগ পেয়েছেন ১৩ হাজার ৩৩ জন। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপজেলা কর্মকর্তা হিসেবে পরীক্ষা দেওয়া কয়েকজন প্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৫ সালর অক্টোবরে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলেও এখনো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। একইভাবে সাব-রেজিস্ট্রার, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রদর্শকসহ পিএসসির ২৫ থেকে ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষা চলমান রয়েছে।
পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির অনেক পরীক্ষা নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা আছে। সমস্যা সমাধানে আমরা এখন থেকে অযথা পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ক্ষেত্রে বিসিএস উত্তীর্ণদের থেকেই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বিভিন্ন নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। আর পরীক্ষা নিলেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের একই ধরনের পরীক্ষা একসঙ্গে নেওয়া হবে।’
- প্রথম আলো