মাখনে কোলেস্টেরলের ভয়। মার্জারিনে ফ্যাটি অ্যাসিড। ব্যানানা বানিয়ে দিল নতুন পথ। নতুন বাটারে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক হবে। নিয়ন্ত্রণ করা যাবে ব্লাড প্রেশার।
ফলের জগতে তার ‘পাওয়ার হাউস’ পারফরম্যান্স দেখেই ভেবেছিলেন যাদবপুরের গবেষকরা। যে ফল খেতে হাজারো বায়নাক্কা। নয়া আবিষ্কারে বাড়ির খুদেটি টের পাবে না সকাল সকাল পাউরুটির সঙ্গে যে মাখন খেয়ে নিয়েছে, তা আসলে আস্ত দুটো কলা! বোঝারও উপায় নেই, মাখনের বদলে যা চেটেপুটে খেলেন তার মধ্যেই রয়েছে ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কোলেস্টেরলের ভয় তো নেইই, উল্টে কনস্টিপেশনের সমস্যা মিটিয়ে দেবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন মাখন।
নয়ের দশকের শুরু থেকেই প্রাতরাশে হালকা হলুদ রঙের জিনিসটি বাদ দিতে শুরু করেন সকলে। চল্লিশ পেরোলেই কোলেস্টেরলের ভয়। চিকিৎসকরা বলেন, পাউরুটিতে নিয়মিতভাবে মাখনের মতো ডেয়ারি প্রোডাক্ট খেলে সম্ভাবনা বাড়ে কোলেস্টেরলের। দেখা গিয়েছে, হৃদরোগ থেকে একাধিক সমস্যার শত্রূ এক স্নেহপদার্থ। শরীরের কোষে এই ‘ফ্যাট’-ই দায়ী নানা রোগের জন্য। এই এলডিএল বা ক্ষতিকারক কোলেস্টরল কমানোর জন্য মাখন, রেড মিট খাওয়া কমাতে বলেন চিকিৎসকরা। সে সময় বিকল্প হিসাবে মার্জারিনের স্বাদ নিতে শুরু করেন অনেকেই। তবে দেখা যায় হাইড্রোজেনেশন পতিতে মার্জারিন তৈরিতেও শরীরেবাসা বাঁধছে ক্ষতিকর ফ্যাট। অতিরিক্ত মার্জারিন সেবনে রক্তের ঘনত্ব বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই অতিরিক্ত পাম্প করতে হচ্ছে হৃদযন্ত্রকে। সেখান থেকেই ভাবনা চিন্তা শুরু করেন যাদবপুরের ফুড টেকনোলজি বিভাগের গবেষকরা। অবশেষে কলা দিয়েই নতুন মাখন ‘ব্যানানা বাটার’ তৈরি করে ফেলেছেন তাঁরা।
যদি বাড়িতে কেউ বানাতে চান এই মাখন, তবে তাঁরা যোগাযোগ করতে পারেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগে। বিভাগীয় অধ্যাপক উৎপল রায়চৌধুরি জানিয়েছেন, সহজ পদ্ধতিতে নিজেরাই উপকরণ জোগাড় করে ‘ব্যানানা বাটার’ তৈরি করা যায়। ক্ষতিকারক মাখন, মার্জারিন ছেড়ে হার্টের বন্ধু হবে এই কলার-মাখন। অধ্যাপক উৎপল রায়চৌধুরির কথায়, কলার অনেক গুণাগুণ। ভিটামিন বি৬-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে এই ফলে। অ্যানিমিয়ার সমস্যাও মেটাতে সক্ষম এই ফল। বাজারে কলা বাড়বাড়ন্ত হলেও বাড়ির খুদে সদস্যটি সহজে তা মুখে তুলতে চায় না। সেখান থেকেই অন্যভাবে তাকে খাওয়ার টেবিলে হাজির করার চিন্তা শুরু।
কলা দিয়ে মাখন তৈরিতে ঝক্কিও কম। গবেষণাগারে প্রথমে কলাকে ‘স্ম্যাশ’ করে পেস্ট বানিয়ে ফেলা হয়েছে। সারফেস ডেভলপমেণ্ট প্রক্রিয়ায় কলাকে এমনভাবে মসৃণ করা হয়েছে যেখানে মুখে কোনও দানা বা আঁশ কিছুই পড়বে না। এরপর ইমালসিফাই গ্রূপের রাসায়নিক মাপমতো মেশানো হয়েছে। তবে কলার একটি নিজস্ব গন্ধ আছে। উৎপলবাবুর কথায়, “এই গন্ধটাই অনেক বাচ্চা পছন্দ করে না। গন্ধ দূর করতে কলার পেস্টে মেশানো হয়েছে ডাইঅ্যাসিটাইল গ্রূপের ফ্লেভার।”