সারাদিনে কাজের ক্লান্তি, মানসিক চাপের পরও নানান চিন্তায় অনেকেরই রাতে ভালো ঘুম হয় না। আবার সকাল হলেই ছুটতে হয় কর্মস্থলে। সারাদিনই চোখের পাতায় ঘুম ঘুম ভাবটা লেগে থাকে। বাড়তে থাকে অবসাদ আর অস্থিরতা। রাতের ঘুম পুষিয়ে নিতে অল্প মাত্রার ঘুমের ওষুধ খাওয়া ছাড়া আর উপায় থাকে না। কিছুদিন এভাবে চললেও, ঘুম আনতে দরকার হয় আরও বেশি মাত্রার ওষুধ। একটা সময় দেখা যায়, ঘুমের ওষুধের প্রতি পুরোপুরি আসক্তি জন্মে গেছে।
ঘুম ভালো হওয়ার উদ্দেশ্যে ওষুধ খাওয়া হলেও এ অভ্যাসে দীর্ঘকালীন প্রভাব পড়ে শরীরে ওপর। আর সেটি অত্যন্ত মারাত্মক হয়ে দাঁড়াতে পারে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি ম্যাগাজিনে এ বিষয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করা হয়। গবেষণায় কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ঘুম এবং মৃগীরোগ বিভাগের পরিচালক কার্ল বাজিল বলেন, ‘যারা ঘুমের ওষুধ নেন তারা ভালোভাবেই জানেন এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এটি শরীরে কি পরিমাণে ক্ষতি করে তা তারা জানেন না’।
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ঘুমের ওষুধ গ্রহণের অভ্যাস লিভার এবং কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করে’।
বর্তমান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিষন্নতায় ভোগার পরিমাণ কিছুটা বেশি। আর এই মানসিক অবসাদ থেকে বাঁচতে তারা ঘুমের ওষুধের সাহায্য নেয়। তবে একবারে বেশি ঘুমের ওষুধ খাওয়া হলে তা লিভার এবং কিডনির গুরুতর ক্ষতি করতে পারে। আর দীর্ঘদিনের অভ্যাস খুব ধীরে ক্ষতি করবে।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ গোবিন্দ চন্দ্র রায় বলেন, ‘ঘুমের ওষুধ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে দুর্বল করে দিতে পারে। এর ফলে বিভ্রান্তির মতো সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া ঘুমের ওষুধে আসক্ত হয়ে পড়লে শরীরে পানি শূণ্যতা দেখা দেয়। একসময় দেখা যায় পানিশূণ্যতা কিডনিতে কুপ্রভাব ফেলছে। এ কারণে অনেক সময় হেপাটাইটিস ধরনের রোগও হতে পারে’।
ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে উঠার পরেও অনেক সময় সারাদিন এর প্রভাব থেকে যায়। যা কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। যারা গাড়ি চালান তাদের জন্য এটি খুবই বিপদজনক। কারণ কিছু ঘুমের ওষুধে পরের দিন পর্যন্ত এর রেশ অনুভূত হয়। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে ঘুম আনার চেষ্টা করতে হবে। আর ওষুধ খেলে থাকলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, দীর্ঘদিনে এই অভ্যাস আপনার দেহের মারাত্মক ক্ষতি করবেই।