ফাইনালি সে আসছে৷ সব সময়েই মনটা খুশি খুশি৷ যদিও প্রেগন্যান্ট হওয়ার পরে নানা বিধি-নিষেধ আরোপ হয়৷ এটা করে না, ওটা করে না৷ এটা খায় না, ওটা খায় না৷ হাসিমুখে সব মেনে চলে ভাবী মা৷ শরীরের সঙ্গে মনেরও বদল ঘটে৷ এসবের মাঝে কখনও কখনও বিছানায় শরীর জেগে ওঠে৷
কিন্তু প্রেগন্যান্সিতে কি সহবাস করা উচিত? গর্ভস্থ সন্তানের কি তাতে ক্ষতি হয়? হাজার প্রশ্ন ভিড় করে হবু বাবা-মায়ের মনে৷ কী করবেন তখন? সুখের মুহূর্তে অসুখ যাতে না ঢুকে পড়ে তার জন্য জরুরি কিছু সতর্কতাও৷
ন’মাস সহবাসে ফুলস্টপ?
মোটেই না৷ প্রেগন্যান্সির শুরু থেকে শেষ তিন মাস পর্যন্তও যৌনজীবন স্বাভাবিক রাখা যায়৷ প্রেগন্যান্সি নর্মাল হলে গর্ভাবস্থায় চাইলে দম্পতিরা সঙ্গম করতেই পারেন৷ এমনকী এই সময় সেক্স লাইফ সক্রিয় থাকলে তা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে আরও সুন্দর করে তোলে৷ তবে প্রেগন্যান্সির প্রথম পর্যায়ে হরমোনের তারতম্য, ক্লান্তি, ঝিমুনির কারণে যৌন চাহিদা কমে যেতে পারে৷ আরও কিছুদিন পর ওজন বাড়লে, পিঠে যন্ত্রণার মতো কারণেও মিলনের ইচ্ছা কমতে পারে৷
অনেক সময় ভাবী সন্তানের আঘাত লাগতে পারে এই আশঙ্কায় পুরুষরা সহবাস করতে ভয় পান৷ কেউ পিতৃত্বের দায়িত্বে চিন্তিত হয়ে মিলনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন৷ এমন হলে মহিলাদের উচিত তাঁর সঙ্গীর আশঙ্কা কাটিয়ে দেওয়া৷
মিলনের জন্য বাচ্চা নষ্ট হয় না:
প্রেগন্যান্সির সময় যৌনমিলন করলে গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু ঘটতে পারে ভেবে অনেকেই ভয় পান৷ কিন্তু এই আশঙ্কা অমূলক৷ এর জন্য বাচ্চার ক্ষতি হয় না৷ সাধারণত ভ্রুণের বৃদ্ধি স্বাভাবিক না হলে বাচ্চা নষ্ট হতে পারে৷ গর্ভাশয়ের ভিতরে অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইডের দ্বারা গর্ভস্থ ভ্রুণ সুরক্ষিত থাকে৷ এছাড়াও গর্ভাশয়ের দেওয়ালের শক্ত পেশিও বাইরের আঘাত থেকে বাচ্চাকে সুরক্ষিত রাখে৷ তাই যৌনমিলনের কোনও পদ্ধতিতে বাচ্চা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না৷
প্রেগন্যান্সিতে কোনও সমস্যা না থাকলে এবং যৌনজীবন সক্রিয় থাকলেও যদি মিসক্যারেজ হয় ও গোপনাঙ্গে ইনফেকশন হয় তাহলে তার সঙ্গে সহবাসের সাধারণত কোনও সম্পর্ক থাকে না৷
কোন পদ্ধতি নিরাপদ:
স্বামী বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে এবং তাঁর উপরে স্ত্রী – প্রেগন্যান্সিতে এই পজিশনে যৌনমিলন করা নিরাপদ৷ এতে স্ত্রীর নিজের উপর কন্ট্রোল থাকে৷ ফলে তাঁর ব্যথা লাগে না৷ যন্ত্রণা হলে তৎক্ষণাৎ বিষয়টি থামিয়ে দিতে পারেন৷ তবে স্ত্রী নিচে ও স্বামী উপরে এই পজিশন না করাই ভাল৷ এছাড়া বিছানায় সাইড হয়ে শুয়ে স্বামী-স্ত্রী মুখোমুখি হয়েও মিলিত হতে পারেন৷ যদি স্ত্রী নিচে ও স্বামী উপরেও থাকেন তাহলে সার্ভিক্সকে ঢেকে রাখা মিউকাসের প্লাগ ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করে৷
এই সময় ওরাল সেক্স করতেও কোনও অসুবিধা নেই৷ তবে প্রেগন্যান্সির সময় অ্যানাল সেক্স না করাই ভাল৷ এতে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়৷ পায়ুদ্বার দিয়ে যোনিতে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে৷
এই সময় যৌনাঙ্গে কোনও লুব্রিকেটিং তেল বা জেল লাগানো উচিত নয়৷ এর থেকে চুলকানি বা অ্যালার্জি হতে পারে৷ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এগুলি প্রেগন্যান্সিতে ব্যবহার করা উচিত নয়৷ মিলনের পর ভাল করে যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করে তোয়ালে বা টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে নিতে হবে৷
আগের মতোই আনন্দের?
এই সময় শরীরী সুখ ঠিক আগের মতো অনেক মহিলাই পান না৷ অনেকের বক্তব্য, এই সময় উত্তেজনা কম অনুভূত হয়৷ অর্গ্যাজম ঠিকমতো হয় না৷ মিলনের পর ব্যথা হয়৷ অর্গ্যাজম হলে তলপেটে খিঁচ ধরে৷ বিশেষ করে ছ’মাসের পর এই ব্যথা হতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে কয়েক মিনিট অপেক্ষার পর গর্ভাশয়ের মাসল শিথিল হয়ে গেলে ব্যথা কমে যায়৷
মিলিত না হয়েও সুখী:
দু’জনের কেউই এই সময় মিলিত হতে না চাইলেও মুহূর্তগুলি সুন্দর করে তোলা যায়৷ স্বামী-স্ত্রীর নানা প্রয়োজন, মনের কথা একে অপরের সঙ্গে শেয়ার করুন৷ হাতে হাত রেখে বসে থাকুন৷ চুম্বন করে একে অপরের শরীরী স্পর্শ নিন৷ পরস্পরকে মাসাজ করে দিন৷ কাছাকাছি না থাকলে মাঝে মাঝেই ফোন বা টেক্সট করে খোঁজ নিন৷
সন্তান জন্মের পর কবে সঙ্গম?
সাধারণত চার থেকে ছ’সপ্তাহ পর পুনরায় মিলিত হওয়া যায়৷ তবে ডেলিভারির পর মা একটু দুর্বল থাকেন৷ পুরোপুরি ফিট হতে সময় লাগে অন্তত এক মাস৷ তাই সার্ভিক্সের মুখ বন্ধ হলে, সন্তানের জন্ম পরবর্তী (পোস্টপার্টম) ব্লিডিং বন্ধ হলে ও অন্যান্য ক্ষত সেরে গেলে তবেই ফের মিলিত হওয়া উচিত৷ তবে পরবর্তী প্রেগন্যান্সি এড়াতে গর্ভনিরোধক পিল বা কন্ডোমের মতো নীরোধ ব্যবহার করতে হবে৷