ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যের জের ধরে বিতর্কের মুখে পড়া কাস্টমস কর্মকর্তা সুশান্ত পালকে তাৎক্ষণিক বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রংপুরের কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দ্বিতীয় সচিব মো. শামসুদ্দীন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ দেওয়া হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সুশাসন ও আধুনিক ব্যবস্থাপনা কাঠামোর ‘জিরো টলারেন্স নীতির’ আওতায় বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারের কর্মকর্তা খুলনার কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার সুশান্ত পালকে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাঁর নামের পাশে ‘বিশেষ ব্যবস্থা’ হিসেবে রংপুরের কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে বদলি/পদায়ন করা হলো। আজ ২৭ অক্টোবর অপরাহ্ন থেকে তাৎক্ষণিকভাবে (স্ট্যান্ড রিলিজ) অবমুক্ত করা হলো। তাঁর মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কমিশনারকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি হলো।
তবে সহকারী কমিশনার সুশান্ত পালকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শুল্ক, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান।
আজ রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজের ফেসবুক পেজে তিনি লিখেন, ‘সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ফেসবুকে অশোভন মন্তব্য করায় সহকারী কমিশনার অব কাস্টমস সুশান্ত পালকে এনবিআর ওএসডি করেছে। একই সাথে তাকে মানসিক চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসার আদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রমাণিত হলে চাকুরিচ্যুতি হতে পারে এই কর্মকর্তার।’
মইনুল খান আরো বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরব। তাঁর মন্তব্য এই প্রতিষ্ঠানকে অবমাননা এবং অনেককে আহত করেছে। এনবিআর সুশাসনের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। বর্তমানে সুশান্তকে রংপুরে সংযুক্ত করা হয়েছে। সাথে রয়েছে স্ট্যান্ড রিলিজ। আরো ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।’
মইনুল খান আরো বলেন, ‘আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর এনবিআরকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এ ধরনের মন্তব্য করা যায় না। আশা করি সুশান্তের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থায় ছাত্রদের ক্ষোভ প্রশমিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবার কাছে অত্যন্ত আবেগ ও সম্মানের জায়গা।’
এর আগে আজ সকালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও এর শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘বিভ্রান্তিমূলক’ স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে সুশান্ত পালের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা (নম্বর : ৩৪) করা হয়।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক জানান, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় সুশান্ত পালের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মোতাক্কাবীর খান প্রবাস।
মামলার বাদী প্রবাস বলেন, সম্প্রতি সুশান্ত পাল তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, আবাসিক হল এবং ছাত্রীদের নিয়ে বিভ্রান্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দেন। এরপর বিভিন্নভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টরা। স্ট্যাটাসটির বিরুদ্ধে মানববন্ধনও করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
অনলাইনেও সমালোচনার মুখে পড়েন সুশান্ত পাল। পরে নিজের স্ট্যাটাসটি প্রত্যাহার করে নেন তিনি। তারপরও সুশান্ত পালের যথাযথ শাস্তির জন্য আজ মামলা করেছেন বলে জানান প্রবাস।
৩০তম বিসিএসে প্রথম স্থান অধিকার করে শুল্ক ও আবগারি বিভাগে যোগ দেন সুশান্ত পাল। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন এই কাস্টমস কর্মকর্তা।
সূত্রঃ এনটিভি বিডি