রঙচঙে প্যাকেট আর আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দেখে আজকাল অনেক প্রক্রিয়াজাত করা অস্বাস্থ্যকর খাবার আমরা আমাদের শিশুদের হাতে তুলে দিচ্ছি। সেটা নিজেদের ইচ্ছাই হোক বা তাদের আবদার পূরণের জন্যই হোক। কিন্তু অনেকেই একবারও ভেবে দেখি না খাবার গুলো আসলেই শিশুদের জন্য কতটা স্বাস্থ্যকর। তাই এসব খাবারের পরিবর্তে ছোটবেলা থেকেই শিশুদের ঘরে তৈরি তাজা এবং টাটকা খাবার দিয়ে অভ্যস্ত করতে হবে।
প্রক্রিয়াজাত এসব খাবারগুলো শিশুদের আকর্ষণ বাড়াতে তাদের প্রিয় কার্টুন বা সিরিজের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব খাবারগুলো কৃত্রিম রঙ এবং চিনিতে ভরপুর থাকে।
এসব খাবারগুলো বেশ বিপদজনক কারন এগুলো খাওয়ার কারনে বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত চঞ্চলতা এমনকি অতিরিক্ত স্থূলতাও হতে পারে।
প্রক্রিয়াজাতকরা যে খাবারগুলো কখনোই বাচ্চাদের দেয়া উচিত নয় তা এখানে উল্লেখ করা হলো:
চিনি মিশ্রিত কিছু সিরিয়াল:
শস্য থেকে তৈরি করা বিভিন্ন সিরিয়াল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় তবে সমস্যা হচ্ছে কৃত্রিম রঙ, স্বাদ এবং অতিরিক্ত চিনি যোগ করা সিরিয়ালগুলোতে। এগুলো কোনো ভাবেই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।
অনেক নামকরা কোম্পানি গুলোর সিরিয়ালে প্রায় ৫০% চিনি মিশ্রিত থাকে যা প্রায় ক্যান্ডির সমান। তাই সিরিয়াল কেনার আগে এগুলোর উপাদানগুলো দেখে নিন এবং যেগুলোতে কর্ণ সিরাপ এবং ফ্রুক্টোজ বেশি থাকে সেগুলো বর্জন করুন।এমন সিরিয়ালগুলো কিনুন যেগুলো হোল গ্রেইন এবং এক পরিবেশনে ৫ গ্রামের বেশি চিনি নেই।
ফল ও সবজি দিয়ে বিভিন্ন নাস্তা, বিভিন্ন আকর্ষণীয় আকৃতির টোষ্ট তৈরি করে দিতে পারেন আপনার শিশুকে।
ফলের তৈরি প্যাকেটজাত খাবার:
সাধারণত বাজারে প্যাকেটজাত যেসব ফলের জুস পাওয়া যায় সেগুলো আঠালো চিনি, কৃত্রিম রঙ ছাড়া তেমন কিছু থাকে না। কোনো ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে না, খুব সামান্য পরিমান ফলে রস তাতে থাকে। যদিও ফল দিয়ে তৈরি খাবারে ফ্যাট থাকে না কিন্তু তাতে থাকা অস্বাস্থ্যকর চিনি দেহের ভেতরে গিয়ে ফ্যাটে পরিনত হয়।
যদি শিশু খুব খেতেই চায় তাহলে বাসায় বিভিন্ন গামি বা ক্যান্ডি তৈরি করে দিতে পারেন। আরো তৈরি করে দিতে পারেন স্বাস্থ্যসম্মত ফলের জুস।
চিনিযুক্ত রঙ্গিন জুস, সিরাপ ও গ্যাস ড্রিঙ্কস:
আমরা অনেক সময়ই শিশুদের বিভিন্ন বায়না রক্ষার্থে চিনিযুক্ত রঙ্গিন সিরাপ ও গ্যাস ড্রিঙ্কস তাদের হাতে তুলে দেই যা তাদের জন্য কোনো ভাবেই স্বাস্থ্যকর নয়। এসব সিরাপ আর গ্যাস ড্রিঙ্কসের তফাৎ হলো শুধু মাত্র গ্যাসে।
কারন যদি ফলের জুস ১০০% খাটি না হয় তাহলে এগুলো আর গ্যাস ড্রিঙ্কসের মাঝে কোনো তফাৎ থাকে না। তাই শিশুদের রঙ্গিন ড্রিঙ্কস দিতে চাইলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক রঙের ফলের জুস বাসায় তৈরি দিন।
রঙ্গিন বরফের গোলা:
আজকাল বিভিন্ন স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে একটি বিপদজনক খাবার দেখা যায় সেটা হলো বিভিন্ন রঙ বেরঙের বরফের গোলা। এটা খুবই অস্বাস্থ্যকর একটি খাবার। এতে বেশির ভাগ সময়ই খাবারের অনুপযোগী রঙ এবং পানি ব্যবহার করা হয়। এটি নিয়মিত খেলে কিডনি, লিভারের রোগ থেকে শুরু করে ক্যান্সারের মত মরণ ব্যাধিও হতে পারে।
তাই শিশুদের সুস্থতার কথা চিন্তা করে এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার না দিয়ে বাজার থেকে বিভিন্ন সেইপের আকর্ষণীয় মোল্ড কিনে বিভিন্ন ফল বা সবজির ললি বা আইসক্রিম তৈরি করে দিন।
বিভিন্ন রঙ্গিন সবজি বিশেষ করে বিট, গাজর, রঙ্গিন শাক ইত্যাদি দিয়ে ললি তৈরি করে শিশুদের দিলে তারা কোনো ধরনের অনুযোগ ছাড়াই সবজি খাবে ।
চিপস:
শিশুদের অন্যতম একটি প্রিয় খাবার হচ্ছে এই চিপস। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এগুলোতে থাকে প্রচুর পরিমানে চিনি, প্রিজারভেটিভ, কৃত্রিম আঁশ ও রঙ এবং তাতে সত্যিকার ভাবে কোনো আঁশ বা পুষ্টিউপাদান থাকেই না। তাই যদি শিশুদের এটা খাওয়াতেই চান তবে বিভিন্ন আকর্ষণীয় আকৃতিতে কেটে বাসায় চিপস তৈরি করে দিন। প্রয়োজনে বেশি করে বানিয়ে বোতলে রেখে দিন।
আলু, কলা, স্ট্রবেরি, আপেল ইত্যাদির মত ফল ও সবজি পাতলা করে কেটে রোদে শুকিয়ে তেলে ভেঁজে চিপস তৈরি করে দিন আপনার শিশুকে। তারা খেতে যেমন মজা পাবে সেই সাথে পাবে স্বাস্থ্যকর খাবারের নিশ্চয়তা।
তাই শিশুদের প্রক্রিয়াজাত করা খাবার খাওয়ানো বর্জন করুন এবং স্বাস্থ্যের উপর এসব খাবারের বিরূপ প্রভাব থেকে তাদের রক্ষা করতে সাহায্য করুন।
যদি ছোট থেকে শিশুদের অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে দূরে রাখতে পারেন তাহলে ভবিষ্যতে তারা স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচন করা শিখবে।