পুষ্টিকর খাবার হিসেবে ডিম অত্যন্ত জনপ্রিয়। ডিমে থাকা বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান, দেহের ক্যালরি সরবরাহ থেকে শুরু করে নানা খাদ্যপ্রাণও সরবরাহ করে। ডিম দামেও কম। অনেকের কাছে ডিম বেশ পছন্দের। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে নকল ডিমের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে নকল ডিমকে গুজব বললেও এবার সত্যি সত্যি ধরা পড়েছে প্লাস্টিকের নকল ডিম।
সম্প্রতি ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্লাস্টিকের নকল ডিম দেখে বোঝার কোন উপায় নেই এটা নকল। তবে কীভাবে ধরা পড়ল? গত ২৯ মার্চ বুধবার কলকাতার জলার এক বাসিন্দা রাধা গোবিন্দ সাহা লেনের একটি ডিমের দোকান থেকে কয়েক ডজন ডিম কেনেন। অনিতা কুমার নামের এক মহিলা ওই ডিম কেনার পর পরদিন সকালে তার স্বামী-সন্তানকে নাস্তায় ডিম ভেজে দিতে যেয়ে লক্ষ করলেন ডিমের কুসুম হালকা প্লাস্টিকের আবরণে মোড়ানো। কড়াইতে দিতেই তিনি প্লাস্টিক পোড়া গন্ধ পান। ভাল মতো যাচাই করার জন্য তিনি অন্য একটি প্লেটে আরো কয়েকটি ডিম ভেঙ্গে দেখলেন সেগুলোতেও প্লাস্টিকের আবরণ রয়েছে। তিনি মোমবাতি জ্বালিয়ে প্লাস্টিকের আবরণ পোড়ানোর চেষ্টা করতেই ফের প্লাস্টিক পোড়া গন্ধ পান।
এমন ঘটনার পর অনিতা কুমার তার স্বামীকে নিয়ে সরাসরি চলে যান তিলজলা থানায়। সেখানে যেয়ে তিনি পুলিশের কাছে তার অভিযোগ জানান। ৩০ মার্চ বৃহস্পতিবার অভিযোগ পেয়ে তল্লাশিতে নামে পুলিশ।
রাধা গোবিন্দ সাহা লেনের ডিম বিক্রেতা শামীম আনসারিকে প্লাস্টিকের ডিমসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তার করার পরপরই তিনি আরো কয়েকজন প্লাস্টিক ডিম বিক্রেতার সন্ধান দেন। পরে ৩১ মার্চ শুক্রবার শিয়ালদহের ডিম পট্টিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নকল ডিম জব্দ করে। আর কলকাতার পার্ক সার্কাস বাজার থেকে আটক করা হয় শামীম আনসারি নামে অপর একজন নকল ডিম বিক্রেতাকে। আটককৃতদের দেয়া তথ্য থেকে নকল ডিম উদ্ধার করা হয়েছে কলকাতা থেকে একশো কিলোমিটার দূরের বর্ধমান জেলার কালনা গ্রামে থেকেও। সেখান থেকে পুলিশ তিন পেটি নকল ডিম আটক করেছে।
শুধু কলকাতা নয়। আশে পাশের গ্রামগুলোতে ছাড়িয়ে গেছে ওই নকল ডিম। এসব নকল ডিম বাংলাদেশেও পাঁচার হওয়ার আশঙ্কা করছে কলকাতার গোয়েন্দা পুলিশ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সতর্কতা জারি করেছে পুলিশ। বিশেষ করে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, উত্তর চব্বিশ পরগনা, মুর্শিদাবাদ এবং নদীয়া জেলার পুলিশকে সর্তক করে দিয়েছে প্রশাসন।
কলকাতা পুলিশ ধারণ করছে, চীন হতে এসব নকল ডিম চোরাই পথে ভারতে প্রবেশ করেছে। পরে তা অন্ধপ্রদেশ থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এর সাথে জড়িত দুজন ডিলারকে পুলিশ খুঁজছে। ইতিমধ্যে প্লাস্টিকের ডিমের নমুনা দিল্লির সেন্ট্রাল ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। সেখানকার রিপোর্ট পাওয়া গেলে বিস্তারিত জানা যাবে ডিম সম্পর্কে। কলকাতা করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বলেন, প্লাস্টিক ডিম স্বস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এর সরবরাহ থামাতে না পারলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়বে। আমরা বাজার নকল ডিম প্রবেশ ঢেকাতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেব।
খবর - ২৪লাইভনিউজপেপার