অনেকের চুলে সারাবছরই খুশকির উপদ্রব দেখা যায়। এর মূল কারণ হচ্ছে রুক্ষ আবহাওয়া এবং ধুলোবালি যা মাথার ত্বকে খুশকির উপদ্রব বাড়ায়। খুশকি থেকে রেহাই পেতে বাজারে নানান ধরনের শ্যাম্পু ও লোশন পাওয়া যায়। তবে খুশকির উপদ্রব দ্রুত দূর করার রয়েছে বেশ কিছু কার্যকরী ঘরোয়া উপায়। একটু সময় বের করে নিয়ে এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করলে মুক্তি পাবেন যন্ত্রণাদায়ক খুশকির হাত থেকে।
১. লেবুর রস:দুই টেবিল-চামচ লেবুর রস অল্প পানির সাথে মিশিয়ে মাথার ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। ২-৫ মিনিট ম্যাসাজ করার পর চুল ধুয়ে নিতে হবে। খুশকির সমস্যা পুরোপুরি দূর না হওয়া পর্যন্ত এইভাবে চুলে লেবু ব্যবহার করা যাবে।
২. নারিকেল তেল:নারিকেল তেল খুশকির প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া চুলে গোড়ায় ময়েশ্চারাইজ করে খুশকি এবং চুলকানি থেকে রেহাই পেতে সাহায্য করবে নারিকেল তেল। মাথার ত্বকে নারিকেল তেলও লেবুর রসের মিশ্রণ ম্যাসাজ করে ২০ মিনিট পরে ভালো করে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করুন।
৩. জলপাই তেল:মাথার ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখতে চুলের গোড়ায় খুব ভালোভাবে জলপাই তেল ম্যাসাজ করুন। এতে চুলের গোড়ায় জমে থাকা খুশকি আলগা হয়ে আসবে। একটু গরম করে মাথার ত্বকে লাগাবেন ও ঘন্টাখানেক পর ধুয়ে ফেলুন।
৪. তুলসী ও আমলকির মিশ্রণ:কয়েকটি তুলসী পাতা নিয়ে আমলকী পাউডারের সঙ্গে মিশিয়ে ভালো করে পেস্ট করে নিন। তিন মিনিট এই পেস্ট মাথার ত্বকে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মিশ্রণ চুলের ত্বকে পুষ্টি জোগায় এবং খুশকি কমাতে সাহায্য করে।
৫. আপেল সাইডার ভিনেগার:কুসুম গরম পানিতে অল্প আপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। পুরো চুল এই মিশ্রণে ভিজিয়ে কিছুক্ষণ আলতো হাতে মাথার ত্বকে ঘষে নিতে হবে। এরপর চুল ধুয়ে ফেলুন। তবে গোসলের আট থেকে দশ ঘণ্টা আগে যেন চুলে অাপেল সাইডার ভিনেগার ব্যবহার করা হয়।
৬. বেকিং সোডা:এক কাপ কুসুম গরম পানিতে এক টেবিল-চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন শ্যাম্পুর বদলে এই মিশ্রণ ব্যবহার করে চুল পরিষ্কার করতে হবে। তবে চাইলে প্রতিদিনই ব্যবহার করতে পারেন। আর যদি শ্যাম্পুই ব্যবহার করতে হয় তাহলে শ্যাম্পুর সঙ্গে খানিকটা বেকিং সোডা মিশিয়ে চুল পরিষ্কার করুন। বেকিং সোডা খুশকি প্রতিরোধে বেশ কার্যকর।
৭. দই:খুশকির সমস্যা থেকে বাচঁতে দই খুব কার্যকরী। খুশকি দূর করতে দই মাথার ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। ১০ মিনিট রেখে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
৮. অ্যালোভেরা:চুল ধোয়ার ১৫ মিনিট আগে মাথার ত্বকে অ্যালো ভেরা জেল মালিশের পর চুল শ্যাম্পু করে পরিষ্কার করুন।
৯. রসুন:খুশকি দূর করার জন্য রসুনও বেশ কার্যকরী। রসুন পেস্ট করে চুলে ৩০ মিনিট রাখার পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
১০.লবণ:তিন চামচ লবণ মাথার শুষ্ক ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে নিতে হবে দু’তিন মিনিট। এরপরই চুলে শ্যাম্পু করে চুল পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
১১.বিট এবং আদার পেস্ট:খানিকটা আদা এবং বিট নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। প্রতি রাতে মাথায় এই মিশ্রণ লাগিয়ে মালিশ করতে হবে। সকালে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
১২.রিঠা: চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে রিঠার জুরি নেই। তেমনি খুশকি দূর করতেও এটি বেশ কার্যকর। রিঠা পাউডার চুলের ত্বকে লাগিয়ে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে ভালোমতো ধুয়ে ফেলুন।
১৩.পেয়াজের রস:দুটো পেয়াজের রস নিয়ে এক মগ পানিতে মিশিয়ে নিন। মাথায় এই রস ভালো করে লাগিয়ে মালিশ করুন। কিছুক্ষণ পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
১৪.নিমের রস: মাথার খুশকি তাড়তে নিম অত্যন্ত উপযোগী। নিমের রস বা নিম পাতার পেস্ট বানিয়ে মাথায় লাগান। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। খুশকি তাড়ানোর পাশাপাশি চুলে পুষ্টি জোগাবে।
১৫. মেথি: মেথি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে নিয়ে বেটে নিন। ছেঁকে নেয়া পানি ফেলে দেবেন না। এবার বেটে নেয়া মেথি চুলের গোঁড়ায় মাথার ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ৩-৪ ঘণ্টা রেখে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। চুল ধোয়ার পর মেথি ভিজিয়ে রাখা পানি দিয়ে সব শেষে চুল ধুয়ে নিন।
ছেলেরা অতি সহজে খুশকি দূর করতে যা করবেন!
খুশকির সমস্যায় ভুগে থাকেন অধিকাংশ পুরুষেরাই। সঠিক যত্নের অভাবে পুরোপুরি খুশকি দূর করা সম্ভব হয় না সবসময়। কর্মব্যস্ত দিনের মাঝেই খানিকটা সময় করে যত্ন নিতে হবে চুল ও স্ক্যাল্পের। তবেই খুশকির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। চলুন দেখে নেয়া যাক খুশকি দূর করার সঠিক উপায়-
১. একটি কাপে এক কাপ পরিমাপ গরম পানিতে এক কাপ হোয়াইট ভিনেগার নিয়ে ভালোভাবে মিশান। এবার এই মিশ্রণ নিয়ে চুলের গোঁড়ায় সুন্দর করে লাগিয়ে নিন। ১০ থেকে ২০ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে একবার এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে খুশকি কমে আসবে।
২. এক কাপ গরম পানিতে এক টেবিল চামচ বেকিং সোডা নিয়ে ভালোভাবে মেশান (বোতলে নিয়ে ঝাকিয়ে মেশাতে পারেন।) শ্যাম্পু করার আগে বা শ্যাম্পুর সাথে মিশ্রণটি মিশিয়ে নিয়ে ভালোভাবে চুল শ্যাম্পু করুন। সপ্তাহে একবার এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
৩. পরিমাণ মতো নিমপাতা ও গরম পানি নিন। তারপর পানিতে নিমপাতা সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে এই পানি দিয়ে আপনার মাথা ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে খুশকি কমে যাবে।
৪. মাথার ত্বকে পরিমাণ মতো লেবুর রস নিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে ৫ থেকে ৭ মিনিট রাখুন। এরপর ১ চা চামচ লেবুর রস ও ১ কাপ পানি মিশিয়ে সেটা দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। যতদিন খুশকি পুরোপুরি না যায় ততদিন এভাবে ব্যবহার করুন।
৫. পরিমাণমতো অ্যালোভেরা জেল মাথার ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর শুধু পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এরপর আরো ১৫ মিনিট পর চুল শ্যাম্পু করে ফেলুন। মাসে দুইবার ব্যবহার করুন।