মুখভর্তি দাড়ি তার। মাটি ছুঁই ছুঁই। সে দাড়ির দৈর্ঘ্য পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি- প্রায় সাড়ে তিন হাত। সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার মাহতাব উদ্দিনের এই লম্বা দাড়ি এর মধ্যে তাকে বিশেষ পরিচিতি এনে দিয়েছে। এই দাড়ির জন্য ৬৫ বছরের মানুষটিকে কুষ্টিয়া শহরে প্রায় সবাই চেনে। হাসিখুশি থাকেন বলে লোকজন মাহতাবকে বেশ পছন্দও করে। দৌলতপুর উপজেলার পাককোলা গ্রামে তার পৈতৃক বাড়ি। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের পেয়ারাতলা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকছেন।
রোববার মাহতাব উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘বাপ-দাদার মুখের দাড়ি পেট পর্যন্ত দীর্ঘ ছিল। আশা ছিল, আমার দাড়ি তাদের দাড়ি ছাড়িয়ে যাবে। আল্লাহ সে আশা পূরণ করেছেন।’ জানান, নিয়মিত দাড়ির যত্ন করেন। প্রতিদিন চিরুনি দিয়ে দাড়ি অাঁচড়ান, তেল দেন। সহজে শুকানো যায় না বলে সপ্তাহে এক দিন শ্যাম্পু দিয়ে দাড়ি পরিষ্কার করেন। যেদিন দাড়ি ভেজান, সেদিন দাড়ির পানি শুকাতে দিন পার হয়ে যায়। দাড়ির যত্নে স্ত্রী আশানুর বানু খুব সহায়তা করেন। আমৃত্যু এই দাড়ি রাখার ইচ্ছা রয়েছে তার। মাহতাব বলেন, দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি। ২০০১ সালে গ্রামে মৌসুমি (পাট, তামাক) ব্যবসা করতেন। ২০০২ সাল থেকে মুখে দাড়ি রাখা শুরু করেন।
২০০৪ সালে তিনি পরিবার নিয়ে কুষ্টিয়া শহরে চলে আসেন। শহরের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে বই-খাতা বিক্রির একটি দোকান দেন। পরবর্তী সময়ে এটি বন্ধ করে দেন। ২০০৮ ও ২০১২ সালে দুই দফায় প্রায় এক হাত করে দাড়ি কেটে ফেলেন। পরে আবার বেড়ে ওঠে। এভাবে এখন দাড়ির দৈর্ঘ্য পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি। তার দাড়ি জট পাকানোও নয়। লম্বা, সোজা ও পরিচ্ছন্ন। রাস্তায় চলাচলের সময় ধুলাবালু থেকে রক্ষা পেতে খোঁপার মতো দাড়ি বেঁধে রাখেন। মাহতাব জানান, তিনি আধ্যাত্মিক বাউল লালন শাহের ভক্ত। বিভিন্ন জেলায় বাউলদের সঙ্গে ঘুরতেও যান। যে এলাকায় যান, সেখানের লোকজনই তার সঙ্গে ছবি তুলতে আসেন। কেউ কেউ নকল দাড়ি ভেবে তা স্পর্শ করে যাচাই করতে চান।
যখন দেখেন যে আসল, তখন তারা অবাক হয়ে যান। কুষ্টিয়া শহরের কোটপাড়া এলাকার সিটি মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিপণন ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন মাহতাব উদ্দিন। স্ত্রী আশানুর বানু একটি ক্লিনিকের নার্স। তাদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। সবার বিয়ে হয়ে গেছে। মাহতাব উদ্দিনের নাতি-নাতনিও আছে। পাককোলা গ্রামের বাসিন্দা ও আরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মিল্টন হোসেন বলেন, মাহতাব উদ্দিনের বাপ-দাদারও এমন লম্বা দাড়ি ছিল। শখের বশে মাহতাব লম্বা দাড়ি রেখেছেন। আগে তিনি পরিবার নিয়ে গ্রামেই থাকতেন।