আপনি আছেন » প্রচ্ছদ » খবর

১৯ সাল থেকে সব বোর্ডে অভিন্ন প্রশ্নে হতে পারে পরীক্ষা!

২০১৯ সাল থেকে সকল শিক্ষা বোর্ডে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা গ্রহণসহ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে ১৫ দফা সুপারিশ করেছেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা। তারা শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমাতে এসএসসি পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা, চারু ও কারুকলা এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা-বিষয়গুলো পাবলিক পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত না করে ধারাবাহিক মূল্যায়নের সুপারিশ করেছেন। এছাড়া সুপারিশের মধ্যে আছে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) ও সৃজনশীল প্রশ্নপত্র তৈরি ও মানোন্নয়নের জন্য আইটেম ব্যাংক তৈরি করা। গত ২৫ ও ২৬ নবেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কক্সবাজারে এক কর্মশালায় মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে এসব সুপারিশ করেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষাবিদদের সুপারিশগুলো তুলে ধরে বলেছেন, এসব সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পরীক্ষার সময় ও শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমাতে চারটি বিষয় এসএসসি পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত না করে বিদ্যালয় পর্যায়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নের আওতায় আনা হবে। বিষয়গুলোর গুরুত্ব কোনভাবেই কমাচ্ছি না। এত বেশি বিষয় পাবলিক পরীক্ষায় বেশি সময় লাগে, ক্লাস কম হয়। এসব কারণে পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনার জন্য এসব বিষয়কে অন্য পদ্ধতিতে ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়ন করব, পাবলিক পরীক্ষার রুটিনের মধ্যে রাখার প্রয়োজন হবে না।

তবে কবেনাগাদ এসব বিষয় এসএসসি থেকে বাদ যেতে পারে- এমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কবে থেকে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে তা এখনই বলা যাবে না। সবাইকে নিয়ে উপযুক্ত সময়ে আমরা এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করব। বর্তমানে এসএসসিতে মোট কতটি বিষয় ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে নেয়ার সুযোগ আছে তা জানাতে পারেননি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন, শিক্ষাবিদ লেখক ও অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান, অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী প্রমুখ।

২০১৮ সাল থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক পৌঁছানো হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষাবিদদের সুপারিশের মধ্যে আরও আছে, ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম পর্যালোচনার জন্য দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও অন্যদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা, নবম ও দশম শ্রেণীর কয়েকটি বই পরিমার্জন করে আকর্ষণীয় সুখপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজবোধ্য করা, ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ওই ফলের ভিত্তিতে পরীক্ষামূলকভাবে মানসম্মত করা। এছাড়াও নিয়মিত বইপড়া দিবস পালন, যথাসময়ে শিক্ষকদের ‘টিচার্স গাইড’ সরবারহেরও সুপারিশ করেছেন শিক্ষাবিদরা। তাদের সুপারিশ বাস্তবায়নে অভিভাবক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গণমাধ্যম ও সকল অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও মতবিনিময় শুরু করা যেতে পারে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

পরীক্ষার এমসিকিউ এবং সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরির জন্য একটি ‘আইটেম ব্যাংক’ করারও সুপারিশ এসেছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। জানা গেছে, গত ২৫-২৬ নবেম্বর কক্সবাজারের একটি হোটেলে ওই কর্মশালা হয়। যেখানে এমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, ঢাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, শাবি অধ্যাপক শিক্ষাবিদ জাফর ইকবাল, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরীসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা ছাড়াও কয়েক শিক্ষক অংশ নেন। ওই কর্মশালাতেই উঠে আসে নানা সুপারিশ।

সুপারিশে আরও আছে-২০১২ সালের কারিকুলাম পর্যালোচনা করতে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন। স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বই পড়ার জন্য ‘কো-কারিকুলাম এ্যাক্টিভিটি’ অন্তর্ভুক্ত করা যায়। বছরের একদিনকে বইপড়া দিবস হিসেবে পালন করা। পাঠদানে শিক্ষকদের সহায়তায় উপযুক্ত শিক্ষক গাইড যথাসময়ে প্রণয়ন ও মানোন্নয়ন করা। শিক্ষার্থীদের উত্তর লেখায় সহযোগিতা করতে প্রশ্নের সঙ্গে নমুনা কিছু উত্তর যাচাই-বাছাই করে সরবারহ করা।

সুপারিশে আরও আছে ॥ সব শিক্ষককে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নে আবশ্যিকভাবে সম্পৃক্ত করা। বিশ্বে প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশে ‘র স্কোর’ এর পরিবর্তে ‘স্ট্যান্ডারাইজড স্কোর’ ব্যবহার। ‘স্ট্যান্ডারাইজড স্কোর’ ব্যবহার করে ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফল নিয়ে একটি পরীক্ষামূলক ফল তৈরি। ফলাফল মূল্যায়নে নতুন পদ্ধতিতে যাওয়ার আগে অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমকর্মী এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও মতবিনিময় করা। নবম-দশম শ্রেণীর নির্বাচিত কয়েকটি পাঠ্যবই পরিমার্জন করে সুখপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজবোধ্য করতে শিক্ষাবিদ ও লেখকদের নিয়ে একটি প্যানেল তৈরি। এই প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শ্রেণী শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা।

আছে পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনের জন্য ‘টাইম বাউন্ড এ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করতে হবে যাতে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারির আগেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক পৌঁছানো নিশ্চিত হয়। শিক্ষার মানোন্নয়নের অপরিহার্য শর্ত হিসেবে শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ পর্যাপ্ত পরিমাণে বাড়াতে হবে। এসব সুপারিশ তুলে ধরে তা কাজে লাগানো হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এসব সুপারিশই শেষ না। যে কাজ করে আসছি সেগুলোকে এগিয়ে নেয়া হবে। শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্বব্যাপীই শিক্ষার মান নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমাদের মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মানের প্রশ্ন খুব বেশি উঠে আসে।

এতদিন এই ব্যাংকের নাম ছিল প্রশ্নব্যাংক। যশোর বোর্ডের প্রশ্নব্যাংক নিয়ে প্রশংসামূলক লেখাও লিখেছেন শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বাংলাদেশে পরীক্ষা পদ্ধতি বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে পাবলিক পরীক্ষায় ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে স্কোর’র পরিবর্তে ‘স্ট্যান্ডারাইজ স্কোর’ ব্যবহার করার বিষয়টি বিবেচনা করা অপরিহার্য বলে মতামত দিয়েছেন শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবাল। জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বাড়া নিয়ে ঢালাওভাবে সবার সমালোচনা নিয়ে ড. জাফর ইকবাল বলেন, ডাটা এনালাইজ করতে পারলে আসলে জিপিএ-৫ পাওয়ার যোগ্য কিনা, তা জানতে পারব। এজন্য আমরা একটা পরীক্ষা স্ট্যান্ডারাইজ করতে পারি।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, পাঠ্যবইয়ের কারণে আমরা আটকে যাই। দুর্বোধ্য, অস্পষ্ট বহু রকম জিনিস, বানান ভুল থেকে যায়। বইগুলো সব সময় আকর্ষণীয় হয় না। পরীক্ষা ও বইয়ের বোঝা কমবে কিনা, বইগুলো আকর্ষণীয় করা হবে কিনা, কারিকুলাম সংস্কারের পর অভিভাবক ও শিক্ষকরা তৈরি কিনা-এ বিষয়গুলো কক্সবাজারের আলোচনায় উঠে আসে বলে জানান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।

সূত্র-জনকণ্ঠ